বরিশাল জেলার ইসলামিয়া কলেজের বিবিএর ছাত্র আরিফুর রহমান (২৪)। গ্রামে মা-বাবা, স্ত্রী, ভাইবোনসহ থাকতেন। এক বছর আগে সোনিয়া আক্তার (২২) নামের এক তরুণীকে বিয়ে করেন। নিজ এলাকায় মানুষকে দিতেন নিয়মিত ইসলামের দাওয়াত। বিয়ের এক মাস না যেতেই আরিফুর রহমান নিখোঁজ। আরিফুর রহমানের মতো এমন গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিখোঁজ হন ৫০ তরুণ। আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সূত্রমতে, কথিত জিহাদের জন্য ঘর ছেড়েছেন এই তরুণেরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নাশকতায় জড়ানোর উদ্দেশ্যেই ঘর ছাড়েন এসব তরুণ।
তথাকথিত জিহাদের নামে ঘর ছেড়েছেন ৫০ তরুণ। তাদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ৩৮ জন নিখোঁজের নাম-পরিচয়সহ প্রকাশ করেছে। র্যাবের প্রকাশ করা নিখোঁজ ৩৮ সদস্যের মধ্যে সংবাদ প্রকাশ-এর সঙ্গে কথা হয় ৯ নিখোঁজ পরিবারের। নিখোঁজদের একটা অংশ মাদ্রাসাপড়ুয়া ছাত্র। বয়স ১৭ থেকে ২৫-এর মধ্যে। তাদের সবাই মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হন।
বরিশালের আরিফুর রহমানের মতো সিলেট জেলার সাইফুল ইসলাম তুহিন স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে সাত মাস আগে নিখোঁজ হন। চার ভাইবোনের মধ্যে তুহিন পরিবারের ছোট সন্তান। তুহিনের বাবা আব্দুল মানিক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তুহিন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। হঠাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রাসা থেকে জানানো হয় তুহিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তী সময়ে থানায় জিডি করার পরও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।”
দেড় বছর ধরে নিখোঁজ ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চার মেয়ের বাবা মশিউর রহমান (৪৫)। পেশায় ছিলেন থাই গ্লাস মিস্ত্রি। মশিউর রহমানের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সংবাদ প্রকাশকে জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হোন মশিউর রহমান। এরপর বাড়িতে ফেরেননি তিনি। চার সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সুমাইয়া।
সুমাইয়া আক্তারের দাবি, তার স্বামী সব সময় নামাজ পড়তেন। মাঝে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে ইসলামের দাওয়াতে যেতেন। আবার বাড়ি ফিরে আসতেন। হঠাৎ করে কাজের কথা বলে আর ফেরেননি তার স্বামী।
ময়মনসিংহ জেলার রিকশাচালক গিয়াস উদ্দিনের ছোট ছেলে মো. শামীম। বংশাল জামিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতেন তিনি। হঠাৎ মার্চ মাসে মাদ্রাসা থেকে তার নিখোঁজের খবর দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। শামীমের নিখোঁজের বিষয়টি সংবাদ প্রকাশকে নিশ্চিত করেন তার বোন শিল্পী বেগম। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আট বছর বয়স থেকে বংশাল মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। হঠাৎ করেই মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় আমার ভাই। মাদ্রাসার শিক্ষকরা কিছু জানাতে পারছেন না।”
শামীমের মতো কুমিল্লার বায়েজীদও (২০) যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হন। তার বাবা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বায়েজীদ মেধাবী ছাত্র ছিল। নিয়মিত বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল। তার মধ্যে কখনো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে সে এভাবে নিখোঁজ হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই।”
শামীম আর বায়েজীদের মতো কুমিল্লা জেলার মো. দিদার, সিলেট জেলার তাহিয়াত চৌধুরী, খুলনা জেলার আল আমিন ও মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারগুলোর দাবি কেন, কী কারণে তারা এভাবে নিখোঁজ হয়েছে, তা আমরা জানি না। আমরা চাই সরকার দ্রুত আমাদের সন্তানদের আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিক।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা তরুণদের দলে ভেড়ানোর জন্য অনলাইনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলেও অনেকেই ধরা পড়ছে। নাশকতা ছড়ানোর লক্ষ্যেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে এসব তরুণ। কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কিশোর ও তরুণ নিখোঁজের খবর আমরা পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব তরুণ নিখোঁজ হয়েছে, সেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে উদ্ধাদের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা এবং বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

































