পূজামণ্ডপে জঙ্গি হামলার শঙ্কা ডিএমপি কমিশনারের


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২, ০৬:৩১ পিএম
পূজামণ্ডপে জঙ্গি হামলার শঙ্কা ডিএমপি কমিশনারের

দেশের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কারণ, বেশ কিছু পূজা মণ্ডপ ঝুঁকিতে রয়েছে।”

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “পূজামণ্ডপে দুই ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করছি। রাজধানীতে ২৪২টি মণ্ডপ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি পূজা মণ্ডপ সবচেয়ে বড়। আপনারা জানেন মাস খানেক আগে ৫০টি ছেলে ঘর ছেড়েছে। কোথায় তারা ট্রেনিং করছে সেটা জানার চেষ্টা করছি আমরা। তাদের বিষয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। আশা করি, তারা ফিল্ডে কোনো অপারেশন করার আগেই আমরা তাদের ধরে ফেলব। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রটিয়ে এবং ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি তৈরি করে একটি চক্র। এদের ঝুঁকি কিন্তু সবসময় থেকে যায়। গত বছর কুমিল্লার একটি ঘটনার বিষয় আপনারা জানেন, মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে যে অপতৎপরতা হয়েছিল; সে রকম ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

শফিকুল ইসলাম বলেন, “জঙ্গিরা এখন অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছে। তারা সেলফ রেডিক্যালাইজড হয়ে (লোন উলফ) হামলায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করছে। কেউ তাদের পোস্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আমরা অ্যালার্ট আছি।” পূজায় কোনো সহিংস ঘটনার আগে গোয়েন্দা তথ্য আমাদের থাকবে বলে জানান তিনি।

ডিএমপি কমিশনার আরো বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পূজামণ্ডপে আমাদের কন্ট্রোল রুমসহ সব জায়গায় আলাদা ফোর্স মোতায়েন থাকবে। পূজায় কোনো ধরনের নাশকতা যাতে না ঘটে, সেই বিষয়ে খেয়াল রেখে আমরা কাজ করছি। তারপরেও কোথাও হামলা হলে সেটি মোকাবিলার জন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।”

ডিএমপি কমিশনার জানান, ঢাকা মহানগরীর ২৪২টি পূজা মণ্ডপে সিসিটিভির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এরমধ্যে চারটিকে বিশেষ মণ্ডপ হিসেবে ধরেছি। এগুলো হচ্ছে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মন্দির, ধানমন্ডি পূজামণ্ডপ ও বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ। এ চারটা বিশেষ শ্রেণির মণ্ডপে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার জন্য আর্চওয়ে থেকে শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ সবকিছু থাকবে। এছাড়া, ঢাকায় ৫টা বৃহত্তর মন্দির রয়েছে। সেগুলো হলো সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, উত্তরা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের পূজামণ্ডপ। এগুলোতেও সিসিটিভিসহ আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া দুই তারকা চিহ্নিত ৮৬টি পূজামণ্ডপ, এক তারকা বিশিষ্ট ৭৭টি এবং সাধারণ শ্রেণির ৬১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এসব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আমাদের যেমন সাধারণ ফোর্স নিয়োজিত থাকবে, তেমনি আয়োজকদের পক্ষ থেকেও পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে পাঁচটি জাতীয় পূজামণ্ডপে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এখানে পুলিশ, ডিবি ও আনসার সদস্যদের ২৪ ঘণ্টা ডিউটি পোস্ট থাকবে। পাশাপাশি সোয়াত টিমও এখানে টহলে থাকবে। এছাড়া পূজা উদযাপন কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এখানে প্রবেশ পথে ডিটেক্টর রাখা হয়েছে।

“আমি অনুরোধ করব আপনারা কোন ভ্যানিটি ব্যাগ বা অন্য কোনো ব্যাগ এখানে নিয়ে আসবেন না। আনলে এগুলো প্রবেশের আগেই রেখে দেওয়া হবে।” অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।

পূজায় এসে ইভটিজিং, মাদক নিয়ে নাচানাচি প্রতিরোধ এবং সারা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকবে। এছাড়া বিসর্জনের দিন নির্দিষ্ট রুট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিসর্জনস্থলে পৌঁছাবে। সুশৃঙ্খলভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়াসম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!