গুরুতর অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়, যা সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১–এর ২(ক) ধারার ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এর ফলে তার নিরাপত্তা বিধানে এসএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
কাকে বলা হয় ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’?
রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী—বা সমমর্যাদার যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হয়। তবে প্রয়োজনবোধে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্য কাউকেও এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
এসএসএফ আইন অনুযায়ী, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরাও এই শ্রেণিতে পড়তে পারেন।
কীভাবে ঘোষণা করা হয়?
সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়—বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়—সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় কে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তা পাবেন। পদাধিকারজনিত কারণে যাঁরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ মর্যাদাভুক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে আলাদা প্রজ্ঞাপন প্রয়োজন হয় না।
যেসব সুবিধা ও নিরাপত্তা পাওয়া যায়
এসএসএফ আইনের ৮(২) ধারা অনুযায়ী, ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ সার্বিক শারীরিক নিরাপত্তার দায়িত্ব এসএসএফের ওপর ন্যস্ত। এর অংশ হিসেবে—
- ২৪ ঘণ্টা সশস্ত্র নিরাপত্তা
- সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্তে গোয়েন্দা নজরদারি
- হুমকি মনে হলে বিশেষ ব্যক্তি বা সন্দেহভাজনকে পরোয়ানা ছাড়াই আটক করার ক্ষমতা
- প্রয়োজনে অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি
- সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোনো ধরনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ
এসএসএফের এই কার্যক্রম দেশের যেকোনো স্থানে প্রয়োগযোগ্য।
এর আগেও ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে স্বল্প সময়ের জন্য ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছিল।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনি জটিলতাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর ২১ নভেম্বর বাসায় ফেরার পর তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তিনি নিউমোনিয়ার পাশাপাশি আরও কয়েকটি জটিল সমস্যায় ভুগছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান জানান, “ম্যাডাম অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন। সিসিইউ–আইসিইউ–ভেন্টিলেশনের সমন্বিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জাতির কাছে আমরা দোয়া চাই।”































