অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃহস্পতিবার বিকালে বইমেলায় গিয়ে দেখা যায় মেলা জমে উঠার চিত্র।
বইপ্রেমী প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা
মেলায় ঢুকতেই প্রবেশদ্বারে টিএসসি প্রাঙ্গণে ১৫ জন সদস্যের একটি সেচ্ছাসেবক দল চোখে পড়ে। কথা হলো ‘সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’-এর সেচ্ছাসেবক জাবেদের সঙ্গে। নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “বইমেলায় যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী ও পায়ে হেঁটে যাদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়, তাদের হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার জন্যই আমাদের এ পদক্ষেপ। সেবার কাজে মেলার দুই প্রান্ত— টিএসসি এবং দোয়েল চত্বরে মোট ১৫টি হুইল চেয়ার আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী বইপ্রেমী মানুষদের সেবা দিতে।”
মেলায় মাতৃদুগ্ধ কেন্দ্র, বসার জায়গা
মেলার ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ‘মাতৃদুগ্ধ কেন্দ্র’। শিশুকে নিয়ে মায়েরা যেন খুব সহজেই মেলায় আসতে পারেন, তার জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আছে বসার জায়গা। আছে খাবার পানির ব্যবস্থাও।
এখনও চলছে নির্মাণকাজ
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনেক স্টলই ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। চলছে স্টলের নির্মাণ কাজ। এ বিষয়ে কথা হয় রাজিয়া সুলতানা ঈশিতার সঙ্গে। তিনি বলেন, “অল্প সময়ের ব্যবধানে বইমেলা হওয়ার সিদ্ধন্তে মূলত এমন অবস্থা। আমরা আশা করেছিলাম ১৫ তারিখ থেকেই সব স্টল প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও নির্মাণ কাজ চলেছে।”
ক্ষুদে পাঠকদের মেলা
বইমেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষুদে পাঠকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নতুন বই কেনার জন্য মেলায় তাদের উচ্ছ্বাস বাবা-মায়েরও খুশির কারণ হয়েছে। পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করতে তারা ছুটাছুটি করছে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। কিনছে হাস্যরসাত্মকসহ ভূতের গল্পের বই। তাছাড়া শিশুদের পছন্দের তালিকাতে রয়েছে ছড়া ও ছবির বইও।
বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশা
সংবাদ প্রকাশের কাছে বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপক রশিদ কামাল, “বইমেলা বাঙালির কাঙ্ক্ষিত একটি অধ্যায়ের নাম। বাঙালির রক্তাক্ত সংগ্রমের ইতিহাসের পথ ধরেই আমাদের এ বইমেলা। আমরা পাঠক, লেখক, প্রকাশক সকলেই মুখিয়ে থাকি এই মাসের অপেক্ষায়। তবে গত বছর বইমেলা নিয়ে অনুশোচনা ছিল বেশ। আশা করছি এ বছর বইমেলার সময়সীমা বাড়বে।”
বইয়ের সম্পাদনা নিয়ে প্রকাশকের অভিমত
বইমেলাতে প্রকাশ হচ্ছে ভুলে ভরা বই। এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জহিরুল অবেদীন জুয়েল। তিনি বলেন, “বই প্রকাশে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বানান ও সঠিক বাক্যগঠন। একটি বই পাঠকের কাছে ভুল বানানে পৌঁছালে তার ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। বড়রা বানান ভুল সম্পর্কে সচেতন থাকলেও শিশুর হাতে এই অসংগতিপূর্ণ বই গেলে, তা হতে পারে বিপদের কারণ। তাই শিশুদের বই সবসময় সম্পাদনা করতেই হবে।”
বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার মেলায় এসেছে নতুন ৪১টি বই। বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি বইয়ের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৫। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বইয়ের স্টল সংখ্যা কমেছে। গত বছর বইয়ের স্টল সংখ্যা ৮৩৪টি। কিন্তু এবার বেড়েছে প্যাভিলিয়নের সংখ্যা। গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৩টি, যা এবার বেড়ে ৩৫টি হয়েছে। এছাড়া লিটলম্যাগের স্টল পেয়েছে ১২৭টি।