বছরজুড়ে কতই না ঘটনা ঘটে। পুরো বিশ্বে সেরা হওয়ার দৌড়ে বিচিত্র কর্মকাণ্ডে মশগুল থাকেন অনেকে। সেরাদের তালিকায় সেরা ঘটনাগুলো আলোচনায় উঠে আসে। এরপর রেকর্ড গড়ে জায়গা করে নেন গিনেস বুকে। প্রতিবছরের মতো ২০২১ সালেও গিনেস বুকে স্থান পেয়েছে কিছু ঘটনা আর ব্যক্তির নাম। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এসব ঘটনা বা ব্যক্তি অন্যদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন। যাদের নাম জানে এখন পুরো বিশ্ব। ২০২১ সালের সালতামামির আয়োজনে গিনেস বুকে রেকর্ড করা সেই সব খবরের দিকেই ফিরে দেখব এই আয়োজনে।
দড়ি লাফে জোড়া বিশ্ব রেকর্ড রাসেলের
দড়ি লাফে জোড়া বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের রাসেল ইসলাম। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তার নাম উঠেছে। রাসেলের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের সিরজাপাড়া গ্রামে। শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী তিনি। দড়ি লাফের ওপর দুটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ২০১৯ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আবেদন করেন রাসেল। একটি ৩০ সেকেন্ডে এক পায়ে কতবার লাফাতে পারেন এবং অন্যটি ১ মিনিটে এক পায়ের। দুটিতেই নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন রাসেল। ২০২১ সালের ২৯ জুলাই তিনি গিনেস বুক রেকর্ডের সনদ হাতে পান। এর আগে এক পায়ে ৩০ সেকেন্ডে ১৪৪ বার লাফানোর রেকর্ড ভেঙে রাসেল করেন ১৪৫ বার। আর ১ মিনিটে এক পায়ে ২৫৮ বার লাফিয়ে এর আগের বিশ্ব রেকর্ডটিও ভেঙে দেন রাসেল।
শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। গত ১৬ মার্চ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইটে এই রেকর্ডটি যুক্ত হয়। বগুড়ার শিবগঞ্জের শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে ফুটিয়ে তোলা হয় এই শস্যচিত্র। ধানের চারায় শস্যক্ষেতের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয় ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্যচিত্র’ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নেয়।
গিনেস বুকে কিশোরগঞ্জের মনিরুল
হাতের পিঠে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক পেনসিল ব্যালান্স করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচ এবং ২০১৯-২০ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। চলতি বছরের ৩ জুন ৩০ সেকেন্ডে ৫০টি পেনসিল ব্যালান্স করার কৃতিত্ব অর্জন করেন মমিনুল। বাংলাদেশের হয়ে ১৫তম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারী হন তিনি। মমিনুল কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা। তার বাবা মো. জহিরুল ইসলাম এবং মা মোছা. খায়রুন নাহার। দুই ভাইবোনের মধ্যে মনিরুল মা-বাবার প্রথম সন্তান।
চোখের পাপড়িতে বিশ্ব রেকর্ড
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ চোখের পাপড়ির অধিকারী হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখান চীনা নারী ইউ জিনজিয়া। তার চোখের পাপড়ি ৮ ইঞ্চি লম্বা! জিনজিয়া নিজের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন এই রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৬ সালে তার চোখের পাপড়ির দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৫ ইঞ্চি। সে সময় তিনি প্রথমবার গিনেস বুকে নাম লেখান। কিন্তু এই বছর তার চোখের পাপড়ি আরও বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যে। ফলে এবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে দ্বিতীয়বারের মতো গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন এই নারী।
টানা ৮ বার গিনেস বুকে নাম মাগুরার ফয়সালের
মাগুরার তরুণ মাহমুদুল হাসান ফয়সাল ৩০ সেকেন্ডে ৬৬ বার ও ৩০ সেকেন্ডে ৬৮ বার হাতে ফুটবল ঘুরিয়ে গিনেস বুকে দুটি রেকর্ড গড়েছেন। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা তার প্রিয়। ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা আর হতে পারেননি। এরপর শুরু করেন ফুটবল খেলা। খেলতে খেলতেই তিনি ফুটবল নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেন। তখনই মাথায় আসে বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে রেকর্ড গড়ার। মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তিনি। সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের অধিবাসী। এর আগেও তিনি ফুটবল ও বাস্কেটবল বাহুতে ঘুরিয়ে রেকর্ড করেছেন। ৩০ সেকেন্ডে ৬৮ বার বাহুতে ফুটবল ঘুরিয়ে সর্বশেষ রেকর্ডটি তিনি করেন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে। সেই রেকর্ডের জন্য ওয়ার্ল্ড গিনেস রেকর্ড বুক তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের ‘রানি’
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পেল সাভারের শিকড় অ্যাগ্রোর ‘রানি’। তবে এই স্বীকৃতির আগেই ১৯ আগস্ট গরুটি মারা যায়। মাত্র ২০ ইঞ্চি উচ্চতা, লম্বায় ২৩ ইঞ্চি এবং ২৬ কেজি ওজনের বক্সার ভুট্টি জাতের খর্বাকার গরুটি ‘রানি’ নামে পরিচিত। ছোট এই গরুটির মালিক ‘শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। প্রায় এক বছর আগে নওগাঁ থেকে গরুটি সংগ্রহ করেন খামার মালিক। পরে রানিকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু দাবি করে এই বছরের ২ জুলাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের কাছে আবেদন জানায় শিকড় অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষ। ৪ জুলাই প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা যাচাই করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা করে দেয়ে কর্তৃপক্ষ। গিনেস বুকের আগের রেকর্ড অনুযায়ী, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ গরুটি ছিল ভারতের কেরালা রাজ্যের। চার বছর বয়সী ওই গরু উচ্চতায় ২৪ ইঞ্চি, আর ওজন ছিল ৪০ কেজি।
সবচেয়ে বয়স্ক যমজ দুই বোন
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক যমজের রেকর্ড করেছেন জাপানের দুই বোন। তাদের নাম উমেনো সুমিয়ামা ও কৌমি কোদামা। এখন পর্যন্ত জীবিত সবচেয়ে বয়স্ক আইডেনটিকাল টুইন হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তাদের নাম উঠেছে। বর্তমানে এই যমজদের বয়স ১০৭ বছর ৩০০ দিন। এর আগে এই রেকর্ড ছিল জাপানের অপর দুই যমজ বোন প্রয়াত কিন নারিতা ও গিন ক্যানির। তাদের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছেন উমেনো সুমিয়ামা ও কৌমি কোদামা। শোদোশিমা দ্বীপে ১৯১৩ সালের ৫ নভেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন তারা। অনেকটা কাকতালীয়ভাবে জাপানের জাতীয় বয়স্ক দিবসেই নতুন এই রেকর্ডের ঘোষণা করেছে গিনেজ বুক। তাদের বন্ধুত্বসুলভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হল অব ফেমে বিটিএস
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কোরিয়ার গানের দল বিটিএস। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস টুইটে জানিয়েছে, ২০২২ সালে দলটি অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে হল অব ফেমে। বিটিএস গড়েছে জনপ্রিয়তার অনন্য রেকর্ড। গত বছরও প্রায় ২৩টি নতুন রেকর্ড করেছে তারা। ব্রিটিশ ব্র্যান্ড কোল্ডপ্লেকে হটিয়ে স্পোটিফাইয়ে বিটিএস এখন সর্বোচ্চ জনপ্রিয়। এমনকি ইনস্টাগ্রামে বিটিএস সবচেয়ে বেশি অনুসারীর গানের দল।
গিনেস বুকে রোনালদো
আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের একক রেকর্ড গড়ে গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অনন্য এই রেকর্ডের জন্য পর্তুগিজ রাজপুত্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ। ইউরোর মঞ্চেই ইরানের আলী দাইয়ির সর্বোচ্চ ১০৯ গোলের রেকর্ড ভাঙার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন রোনালদো। অবশেষে সেই রেকর্ড ভাঙলেন তিনি। রোনালদোর নামে পাশে এখন গোলসংখ্যা ১১১টি। পর্তুগালের জার্সিতে এই রেকর্ড গড়তে রোনালদোকে খেলতে হয়েছে ১৮০টি ম্যাচ। আগের রেকর্ডধারী দাইয়ি ১০৯ গোল করতে ইরানের জার্সিতে খেলেছেন ১৪৯ ম্যাচ।
এক গাছে ১০ রকমের ফল
অস্ট্রেলিয়ার যুবক হুসাম সারাফ একই গাছে ১০টি ভিন্ন ধরনের ফলের ফলন করিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। কানাডার অটোয়াভিত্তিক সিবিসি রেডিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রেকর্ড গড়া এই গাছটি হুসাম কীভাবে বিশ্বকে দেখেন, তারই একটি রূপক প্রতিচ্ছবি। অস্ট্রেলিয়ার শেপারটনের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাল্টিকালচারাল অফিসার সারাফ ছোট থেকেই গ্রাফটিং বা গাছের কলম করতে আগ্রহী ছিলেন।