• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সাদকাতুল ফিতরা আদায় যেভাবে করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২২, ১১:৪১ এএম
সাদকাতুল ফিতরা আদায় যেভাবে করবেন

পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখা ইবাদত। সেই সঙ্গে যাকাত আদায়, ফিতরা দেওয়াও ইবাদতের অংশ। সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ইবাদতের একটি। পবিত্র কোরআন মজিদে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।

ফিতরা আরবি শব্দ, যা ইসলামে জাকাতুল ফিতর (ফিতরের জাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) ইত্যাদি নামে পরিচিত। সদকা মানে দান, ফিতর মানে রোজার সমাপন বা শেষ। ইসলামী বিধানমতে, সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা আর্থিক ইবাদতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়। ’ (সুরা আলা, আয়াত : ১৪)

অসহায়দের মাঝে ফিতরা বিতরণের মাধ্যমে এটি আদায় করতে হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রমজান মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে এটি আদায় করেন। সাহাবি ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব। (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, “রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য।“ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

সাদকাতুল ফিতরা কীভাবে দান হয়

সাদকাতুল ফিতরা হলো ওই সব খাদ্যবস্তু দান করা, যা দ্বারা সিয়াম পালনকারী তাদের সাওম ভঙ্গ করতেন। বিশেষ করে এমন খাদ্যসামগ্রী দান করা যা দিয়ে গরিব দুঃখীরা ঈদের দিন খেতে পারেন। প্রতিটি সাওম পালনকারীকেই এই ফিতরা আদায় করতে হয়।

কেন দিতে হয়?

পবিত্র রমাদানে সিয়াম পালন করতে গিয়ে অবচেতনমনে কোনো না কোনোভাবে সিয়ামের অনেক সাধারণ ভুলত্রুটি হয়। যেমনঃ সাওমে অবাঞ্ছনীয় অসারতা, গীবত করা, অশ্লীল কথাবার্তা, গালাগালি করাসহ নানান ছোটখাটো সগিরা গুনাহ হয়ে থাকে। এসব ত্রুটির ক্ষতিপূরণ ও সংশোধনী হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর। যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত দানের একটি ইবাদত। এই দানের ফলে আমাদের সিয়াম সমূহের কাফফারা আদায় হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, “সদকাতুল ফিতর দ্বারা সাওম পালনের সব দোষত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়।” -আবু দাউদ

কাদের উপর ফিতরা ওয়াজিব

সাধারণত সব মুসল্লিরাই ফিতরা আদায় করেন। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, ফিতরা  সেই মুসলিমের উপর ফরয, যে ব্যক্তির ঈদের রাত ও দিনের জন্য নিজের এবং পরিবারের আহারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ থাকে। পরিবারে যতজন সদস্য রয়েছে সবারই ফিতরা আদায় করতে হবে। 

ফিতরা আদায়ের সময়

সাদকাতুল ফিতর আদায়ের ফজিলতপূর্ণ সময়ও রয়েছে। ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে ঈদের সালাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফিতরা আদায়ে ফজিলত বেশি। এছাড়াও ঈদের দুই একদিন আগেও ফিতরা আদায় করা যায়। তবে ঈদের নামাজের পর ফিতরা আদায় করা যাবে না। 

ইবনু উমার (রা.) বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) লোকেদের ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার আগেই ফিতরা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন” (বুখারী ১৫০৯)।

ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি নামাজের আগে তা আদায় করে দেবে তবে তার সদকা গ্রহণযোগ্য হবে, আর যে নামাজের পর আদায় করবে তার সদকা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ)”।

যারা ফিতরা পাবেন

আলেমরা জানান, সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকির মিসকিনদের হক, অন্যান্যদের নয়। তাদের দলিল হলো, ইবনে আব্বাস (রা.) এর হাদিস, তিনি বলেন, “আল্লাহর রাসূল ফিতরের জাকাত (ফিতরা) ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ …” (আবু দাউদ, জাকাতুল ফিতর নম্বর ১৬০৬/ হাদিস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নম্বর ৮৪৩)।

সেই অনুযায়ী মিসকিনদের তথা, গরিব, দুঃস্থ, অসহায়, অভাবগ্রস্থদের মাঝেই ফিতরা প্রদান করা যাবে।

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। 

একটি হচ্ছে ‘এক সা’, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘নিসফে সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’=৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এছাড়া গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’=১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম, অর্থাৎ এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে। (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা ১৮)

আমাদের দেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা মতে, ‘এক সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ‘আধা সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, এক কেজি ৬৫০ গ্রাম।

সাদকাতুল ফিতরের উপকারিতা

সাদকাতুল ফিতর আদায় করলে এই দানের বিনিময়ে আল্লাহ্ আমাদের গোনাহগুলোকে ক্ষমা করেন। আল্লাহপাক আমাদের শারিরীক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দান করেছেন। এটি দেহের যাকাত হিসেবেও গণ্য হয়। সুস্থতা এবং আমল করতে পারায় আল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া স্বরুপ ফিতরা আদায় করা হয়।

Link copied!