• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

সন্তান যখন আলাদা


ঝুমকি বসু
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ১১:৫৭ পিএম
সন্তান যখন আলাদা

ছোট থেকেই সবার চেয়ে আলাদা অরণ্য। নিজের মতো থাকে, কারও সঙ্গে কথা বলতে চায় না। খেলাধুলোতেও আগ্রহ নেই। বয়স প্রায় ৬ হতে চলেছে, অথচ একা কিছুই করতে পারে না। চুপচাপ থাকে স্কুলেও। দেখে মনে হবে বাবা-মায়ের ওপর যেন কোনও টান নেই। আসলে অরণ্য অটিস্টিক। অটিজম এক ধরণের ব্রেন ডিজঅর্ডার যা শিশুদের কথা বলা, পড়াশোনা এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে। 
ছোটবেলা থেকেই কানে কম শোনে প্রভা। কথা বলাতেও জড়তা রয়েছে ওর। কিন্তু এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও, প্রতিবার স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম ৫ জনের মধ্যেই সে থাকে। শারীরিক ভঙ্গি বা ঠোঁট নাড়া দেখেই ওর মনের কথা বুঝে নেওয়া রপ্ত করে ফেলেছেন ওর বাবা-মা। স্কুলের শিক্ষকরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। এর ফলে স্কুল, বাড়ি সব জায়গাতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্য প্রভা। 
অরণ্য এবং প্রভা দুজনই একটু আলাদা শিশু। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার, অন্যজন মানসিকভাবে আলাদা। আবার কেউ শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবেই প্রতিবন্ধী। বাসায় এমন শিশু যদি থাকে তাহলে বাবা-মায়ের দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। এসব শিশু সবসময় তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না। ফলে তাদের বড় করে তোলার কাজটা হয়ে যায় আরও কঠিন। তবে পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব যদি একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করেন, তাহলে এসব শিশুর জীবনও হয়ে উঠতে পারে সুস্থ ও সুন্দর। শুধু চাই বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটু বেশি সময়, উৎসাহ এবং অধ্যবসায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান এই বিষয়ে কিছু পরামর্শ জানিয়েছেন। মানসিকভাবে অসুস্থ শিশুর  বাবা-মায়ের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়ে সংবাদ প্রকাশ-কে ডা. মো. আব্দুল মান্নান জানান_

  • সন্তানের শারীরিক বা মানসিক অসুবিধার কথা যখন প্রথম জানবেন, তখন আপনার প্রথম কাজ হবে নিজেকে প্রস্তুত করা। বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে ভালোভাবে সন্তানের অসুবিধাগুলো জানার পর, নিজেরা এই বিষয়ে পড়াশোনা করুন। সন্তানের কী ধরনের অসুখ, কী কী চিকিৎসা আছে, কোনো স্পেশাল থেরাপি করার প্রয়োজন আছে কী না, আপনার শহরে এমন শিশুর কোনো আলাদা বিদ্যালয় আছে কি না, সেগুলোর খোঁজ নিন। বাবা-মায়ের একজন যদি স্পেশাল এডুকেশনের ট্রেনিং নিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। এই নতুন শিক্ষা সন্তানকে নতুন করে চিনতে, ওর ব্যবহার, অনুভূতি সবকিছু নতুন করে বুঝতে আপনাকে সাহায্য করবে।
  •  পরিবারের অন্য সদস্যদের বোঝানোর দায়িত্ব আপনাদেরই। নিজেদের বা সন্তানের ভাগ্যকে কখনো দোষারোপ করবেন না। তাহলে আপনার সন্তান কিন্তু সবার সহানুভূতির পাত্র হয়েই জীবন কাটাবে। ঘনিষ্ট আত্মীয়স্বজনকে শিশুর অসুবিধার কথা বুঝিয়ে বলুন যাতে তারা কোনোরকম অবৈজ্ঞানিক ধারণা মনে না পুষে রাখেন। যদি বোঝানো সত্ত্বেও আপনার সন্তানের সম্পর্কে কেউ কোনো কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তাহলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করুন।
  • অন্য শিশুদের সঙ্গে সন্তানের মেলামেশার ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকুন। শিশু যখন ছোট, নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, সেই সময়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলার সময় নিজে উপস্থিত থাকুন। শিশুর স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গেও এই বিষয়ে কথা বলুন। সন্তান যাতে স্কুলে স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের সাহায্য নিন।
  • ছোটবেলা থেকে শিশুকে নিজের কাজ করতে উৎসাহ দিন। বারবার ভুল করলেও আপনি ধৈর্য হারাবেন না। সন্তানকে বকাঝকা বা অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করবেন না।
  • একেক জন শিশুর একেক রকম প্রয়োজনীয়তা থাকে। স্পেশাল স্কুলে সেটা বুঝেই কারিকুলাম তৈরি করা হয়। খেলাধুলা, গান বাজনা, হাতের কাজ বা ছবি আঁকা সন্তানের যেদিকে ঝোঁক, সেদিকেই তাকে চালনা করুন।
Link copied!