• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

যেভাবে এলো জামাইষষ্ঠীর উৎসব


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২, ১০:২৬ এএম
যেভাবে এলো জামাইষষ্ঠীর উৎসব

জামাইষষ্ঠী বাঙালিদের অন্যতম উৎসব। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাঙালিরা এই রীতি পালন করে ঘটা করেই। বলা যায়, বাঙালি হিন্দু ধর্মাম্বলীদের বারো মাসে তেরো পার্বণের মধ্যে একটি হচ্ছে জামাইষষ্ঠী।

৫ জুন রোববার পালিত হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন উৎসবটি। জামাইষষ্ঠী সাধারণত মেয়ের জামাইকে আদর-আপ্যায়নের মধ্যেই কেটে যায়। অন্যদিকে মেয়ের জামাইও শ্বশুর পক্ষের সদস্যদের জন্য উপহারের আয়োজন করেন। এভাবেই দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই কেটে যায় জামাইষষ্ঠীর বিশেষ আয়োজন।

পঞ্চব্যঞ্জন রান্না, গ্রীষ্মকালীন রসালো ফলে ভরপুর থাকে জামাইষষ্ঠীর আয়োজন। বারো পদের ফল বা নতুন পোশাক নিয়ে জামাইবাবু শ্বশুড়বাড়িতে হাজির হন। আর শ্বশুড় পক্ষ জামাই আপ্যায়নে প্রায় অর্ধ শতাধিক পদের রান্না করেন। পেটপুড়ে খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হুল্লোড়ে কেটে যায় জামাইষষ্ঠীর পুরো আয়োজনটি।

জামাইষষ্ঠীর আয়োজনের পেছনে শুধু অতিথি আপ্যায়নই মুখ্য নয়। এর পেছনে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। যে ইতিহাসকে মান্য করেই জামাইষষ্ঠীর রীতি যুক্ত হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ে। চলুন জামাইষষ্ঠীর উত্সবে মেতে উঠার আগে এর পেছনের ইতিহাস জেনে নেই।

হিন্দু ধর্মাম্বলীদের বিশ্বাস মতে, জামাইষষ্ঠী মূলত লোকায়ত প্রথা। ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকেই এই প্রথার উদ্ভব। প্রাচীন যুগে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সংস্কার ছিল, মেয়ের বিয়ের পর তার বাবা বা মা-মেয়ের বাড়িতে যেতে পারবেন না। যতদিন পর্যন্ত মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা না হন বা সন্তানের জন্ম দেন ততদিন মেয়ের বাবা-মা ওই বাড়িতে যাওয়ার ঘোর নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই মেয়ের মুখ দেখতে এবং মেয়ের দ্রুত সন্তান হওয়ার কামনায় মেয়ে জামাইকে আদরের পরিকল্পনা করা হয় শ্বশুরবাড়িতে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা তিথিতে এই আয়োজন করা হতো। ষষ্ঠীদেবী মাতৃত্বের প্রতীক। ষষ্ঠী তিথির প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হতো। আর মেয়ের জামাইয়ের আপ্যায়নে করা হতো পঞ্চব্যাঞ্জন রান্না। সেই থেকেই পালিত হয়ে আসছে জামাইষষ্ঠী উৎসব।

অন্যদিকে জামাইষষ্ঠী প্রসঙ্গে একটি লোককথার উল্লেখ রয়েছে। কথিত আছে, জনৈক গৃহবধূ শ্বশুরবাড়িতে থাকাকালীন মাছ চুরি করে খেয়ে বারবার বিড়ালের ওপর দোষ দিতেন। এরপর একদিন তার সন্তান হারিয়ে যায়। তখন পাপের ফল ভেবে সন্তান ফিরে পেতে তিনি বনে গিয়ে দেবীষষ্ঠীর আরাধনা শুরু করেন। ওই গৃহবধূর আরাধনায় মা ষষ্ঠী সন্তুষ্ট হলে সেই বনে সন্তান ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অন্য নাম অরণ্যষষ্ঠী। এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার অপরাধে গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই ওই গৃহবধূর মা-বাবা মেয়েকে দেখতে একবার ষষ্ঠীপূজার আয়োজন করে। সেই পুজোর দিন শ্বশুরবাড়িতে আসার জন্য জামাইকে নিমন্ত্রণ করেন। সেই পূজায় সস্ত্রীক জামাই হাজির হন। সেই থেকে বাঙালি হিন্দুসমাজে জামাইষষ্ঠীর নতুন উৎসবের সূচনা হয় বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে। পরিবারে সদ্য বিবাহিত মেয়ে থাকলে সেখানেই এ পার্বণটি ঘটা করে পালন করা হয়।

জামাইষষ্ঠীতে কী হয়? 

এই দিন ষষ্ঠী তিথির প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হয়। মা ষষ্ঠীর আর্শীবাদ রূপে মেয়ের জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘায়ু কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণ সাজান। এক্ষেত্রে ধান সমৃদ্ধির প্রতীক এবং বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া দুর্বা চিরসবুজ ও দীর্ঘ জীবনের প্রতীক ধরা হয়। ধান-দূর্বা দিয়ে জামাইকে আশীর্বাদ করা হয়। সঙ্গে একটি থালায় সাজানো থাকে ৫টি বিভিন্ন রকমের গ্রীষ্মকালীন ফল।

এরপর শুরু হয় আসল চমক। জামাইয়ের জন্য শাশুড়ি মা নিজ হাতে রান্না করেন। পঞ্চব্যাঞ্জনের আয়োজনে থাকে বিভিন্ন পদ। মাছ, মাংস, মিষ্টির নানা আয়োজন। এরপর চলে  উপহার দেওয়া-নেওয়া। নানা রীতিনীতি আর নিয়মের ভিড়েই প্রকাশ পায় জামাই-শ্বাশুড়ির আন্তরিকতা। মেয়ে জামাই বাড়িতে সুখে থাকবে সেই কামনাই থাকে পুরো আয়োজনজুড়ে।

Link copied!