• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

কদরের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যে ইবাদত করবেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২২, ০৩:৩৬ পিএম
কদরের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যে ইবাদত  করবেন

‘লাইলতুল কদর’ আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফারসি পরিভাষা। ‘শব’ অর্থ রাত, আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

আজ পবিত্র শবে-কদর পালন করবে মুসলিম ধর্মপ্রাণরা। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও শুকরিয়া আদায়ে রাতভর জিকির ও প্রার্থনা করা হবে। হাদিস মতে, আল্লাহ মহিমান্বিত এই পবিত্র রাতে কোরআন নাজিল করেন এবং এই রাতকে হাজার বছরের চেয়ে মর্যাদাবান ঘোষণা করেন। এই রাতের কোনো এক সময় পৃথিবীর সব অচেতন পদার্থ, বৃক্ষ-লতা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাহ্ করে। তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব অপরিসীম।

পবিত্র এই শবে কদরের রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দোয়া-দুরূদ, জিকির ইবাদত বেশি করেন। ইহকালের সুখ-সমৃদ্ধি ও পরকালের শান্তির জন্য প্রার্থণা করেন মুসল্লিরা।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত

পবিত্র কোরআন ও সহিহ-হাদিস দ্বারা লাইলাতুল কদরের গুরুত্বের কথা জানা যায়। এ সম্মানিত রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি এ (কোরআনকে) কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাস হতেও উত্তম-কল্যাণময়’ (সুরা আল কদর : ১-৩)।”

 এ রাতটি কোন মাসে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, “রমজান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে-’ (বাকারা : ১৮৫)।”

রাসুলুল্লাহ সা. একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের কোনো বেজোড় রাতে খোঁজ কর’।

কদরের আর একটি অর্থ হলো, ভাগ্য। লাইলাতুল কদরের অর্থ হয় ভাগ্য রজনী। এ রাতেই মানব কল্যাণে আল্লাহ মানুষের জন্য চূড়ান্তু সিদ্ধান্ত ফেরেস্তাদের জানান। আল্লাহ বলেন, ‘এ রাতে প্রতিটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারি করা হয়।’ (সুরা দুখান : ৪)

শবে কদরের নামাজের নিয়ত যেভাবে করবেন

পবিত্র এই রাতে নামাজ আদায় ও কোরআন তেলওয়াত করা হয়। মুসল্লিরা নিয়ত করে শবে কদরের নামাজ আদায় করেন। শবে কদরের নামাজের নিয়ত হচ্ছে -‍‍‘নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্রি নফ্লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।" অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম

নিয়ত বেঁধে নির্দিষ্ট নিয়মে শবে কদরের নামাজ আদায় করতে হয়। শবে কদরের নামাজ দুই রাকআত করে চার রাকআত করে পড়তে হয়। তবে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। ইবাদতের জন্য আপনি যত ইচ্ছে নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন। নিয়ত বেধে এই নামাজ শুরু করা হয় এবং  প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখ্লাস পড়তে হয়।

যেভাবে শবে কদরের নামাজ আদায় করবেন

এ রাতে অর্থ বুঝে কোরআন পড়তে হবে। কোরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ করতে হবে। এই রাতের নামাজ ন্যূনতম ৮ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। সূরা ফাতিহার সঙ্গে যেকোনো সূরা পড়বেন। এই রাতে সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও পড়তে পারেন। রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। রাতের এই অংশে দোয়া কবুল করেন মহান আল্লাহপাক। এছাড়া জিকির ও দোয়া- হাদিসে মগ্ন থাকতে পারেন। 

ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে। হযরত আয়েশা রা: বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ- যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে কি দোয়া করব? জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ ‘আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করণেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।”

সবশেষে মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে রহমত প্রার্থনা করবেন। আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করা, ক্ষমা চাওয়া, রহমত চাওয়া ও জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাওয়ার প্রার্থনার মধ্য দিয়েই পার হতে পারে এই রাত।

Link copied!