• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দামে কম, স্বাদে মজাদার বোবা বিরিয়ানি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১, ০২:৪১ পিএম
দামে কম, স্বাদে মজাদার বোবা বিরিয়ানি

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বিহারি ক্যাম্প এলাকার জেনেভা ক্যাম্প রোডের প্রথম গলিতে ঢুকলে ফায়জানে মদিনা বিরিয়ানি হাউজ বা বোবা বিরিয়ানি দোকানটির অবস্থান। ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরুর দিকে কেবল বিহারীরা এ হাউজের কাস্টমার থাকলেও বর্তমানে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বর্তমানে যার ৯৫ শতাংশ ক্রেতাই ছুটে আসেন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা এবং ১২০ টাকায় বিরিয়ানি পাওয়া যায়। দাম যেমন কম, মানটা ঠিক তেমনই ভালো।

প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে বিক্রি হচ্ছে মজাদার স্বাদের কাচ্চি বিরিয়ানি। গড়ে যেখানে প্রতিদিন ১৫০ কেজি বিরিয়ানি বিক্রি হয়। এখানে মূলত কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাউ বিক্রি করা হয়। জন্মদিন, বিয়ে, গায়ে হলুদসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা ডেলিভারি দিয়ে থাকেন।

আগত ক্রেতারা বলছেন, পুরো ঢাকা শহরে বোবা মামার দোকানে সবচেয়ে কম দামে বিরিয়ানি পাওয়া যায়। যা ঢাকার অন্য যে কোনো এলাকার থেকে দামে কম। 

আক্তার হোসেনের হাতে বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু হলেও বর্তমানে তার বড় ছেলে মো. আফতাব হোসেনের নেতৃত্বে চালাচ্ছেন দুই ভাই সামসাদ ও ইমরান।

দোকানের নাম ফায়জানে মদিনা হলেও এ নামে কেউ চিনবে না। বোবার বিরিয়ানি বললেই সবাই একনামে চেনে। বোবার বিরিয়ানি কেন হলো, এর ব্যাখ্যা দিলেন দোকানের মালিক মো. ইমরান। তিনি বলেন, “বোবার বিরিয়ানি নামকরণ হওয়ার কারণ হচ্ছে, যিনি এই বিরিয়ানি পরিবেশন করেন তিনি বাক্‌ প্রতিবন্ধী। দোকানটি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরই তাকে আমার বাবা নিয়ে এসেছেন। পরে তাকে বিয়ে করিয়েছেন আমার বাবা, ঘরবাড়িও করে দিয়েছেন।”

তখনই এখানকার খাবারের রুচি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সবাইতো আর নাম বলতে পারে না। তাই সবাই নাম ডাকা শুরু করলেন বোবা মামার দোকান নামে। বলতে বলতে এভাবে দোকানের নাম হয়ে যায় বোবার বিরিয়ানি। সেই কারণে সবাই বলতে বলতে আমরাও আর পরিবর্তন করিনি।

এমন কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই বিরিয়ানির, জানতে চাইলে ইমরান আরও বলেন, “আমার বাবার এক বন্ধু ছিলেন ভোলা নামে, তিনি এখানকার বাবুর্চি ছিলেন। তার হাতের রান্নার স্বাদ ছিলো অন্যরকম সুস্বাদু। অন্য যে কোনো জায়গার চেয়ে দাম কম মানে ভালো। এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়।“

কী পরিমাণ বিক্রি হয়, জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন ৫০-৮০ কেজি। আবার কখনো কখনো একশো কেজি বেশি বিরিয়ানি বিক্রি হয়। গড়ে ১৫০ কেজি বিক্রি হয়।”

শ্যামলী রিং রোড থেকে এসেছেন আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যক্তি। খেতে খেতে তিনি বলেন, “আমার ৩৯ বছর বয়সে ২২ বছর ধরে বোবার বিরিয়ানি খেতে আসি। সপ্তাহে ৪/৫ বার চলে আসি। আমার পরিবারের সবাই মাঝে মধ্যে এখানে বিরিয়ানি খেতে চলে আসেন। এখানে কোনো বাসি খাবার দেওয়া হয় না। দামও খুব অল্প। খাবারও খুব মজাদার। উৎসব তো বটেই ফাঁক পেলেই বিরিয়ানি খেতে বোবা মামার দোকানে চলে আসি।“

একইভাবে ফাঁক পেলেই প্রায়ই পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে বোবা বিরিয়ানি খেতে চলে আসেন মাহাদী হাসান নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, “আমি আমার বন্ধুবান্ধবসহ এখানে প্রায়ই বিরিয়ানি খেতে আসি। খুবই সুস্বাদু। তেলের পরিমাণটা একটু কম। রাইসগুলো খুব সফট হয়। খাইতেও অনেক টেস্ট।”

সালাম নামে স্থানীয় একজন মাংস ব্যবসায়ী বিরিয়ানি খেতে থেকে বলছিলেন, “বিরিয়ানি খেতে আমি জাকির হোসেন রোড থেকে এখানে প্রায়ই চলে আসি। বোবার বিরিয়ানি খেতে খুব ভালো লাগে আর স্বাদেও আলাদা। পরিবেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও দোকানের সবার কথাবার্তা অনেক ভালো। বিশেষ করে বোবা মামা আমাদের খুব ভালো করে আপ্যায়ন করেন।”

প্রায় ২০ বছর ধরে সেখানে বাবুর্চির কাজ করছেন মো. ইসফাক। তিনি বলেন, “আগে যে বাবুর্চি ছিল তার সঙ্গে কাজ করতে করতে আমি রান্না শিখছি। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর আমি সে দায়িত্বটা নিয়েছি।”

কী প্রক্রিয়ায় বানানো হয়, সেটা ব্যাখ্যা করলেন ইসফাক। আগে গরম পানি, তারপর চাল, তারপর মাংসের মধ্যে মিক্স করে বসিয়ে দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন দেড়ঘণ্টা মসলার মধ্যে মাখা থাকে। উপাদানের মধ্যে রয়েছে আদা, রসুন, দুধ, গরম মসলা, আলু বোখারা, গুড়া মরিচ, পাঁচফোড়ন, পেঁয়াজ, লবণ, হালকা গোলাপজল, সয়াবিন তেল।

Link copied!