• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫

গরমে আরাম দেবে শীতলপাটি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩, ০১:১৪ পিএম
গরমে আরাম দেবে শীতলপাটি

গরমের প্রশান্তির আরেক নাম শীতলপাটি। আদিকাল থেকেই গ্রামবাংলা ও বাঙালির রয়েছে শীতলপাটির কদর। আধুনিক যুগে এসি, ফ্যানসহ বাতাস শীতলীকরণে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে শীতলপাটির উৎপাদন ও ব্যবহার কমে আসছে। তবে অনেকেই আগ্রহভরে গরমে শীতলপাটিতে ঘুমান। এদিকে দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এখনো শীতলপাটি রপ্তানিযোগ্য পণ্যের স্বীকৃতি পায়নি।

শুষ্ক মৌসুমে শীতলপাটি বেশি গরম হয় না বলেই এটিকে শীতলপাটি বলা হয়। পাইত্রা বা মোর্তা নামের একধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ব মোর্তাগাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে তারপর পাটির বেতি তোলা হয়। এরপর ভাতের মাড় ও পানি মিশিয়ে বেতি জ্বাল দেওয়া হয়। এর ফলে বেতি হয়ে ওঠে মসৃণ ও সাদাটে। বেতির ওপরের খোলস বা ছাল থেকে শীতলপাটি পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ চিকন দড়ি ছাড়াও অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়।

নকশা ও নাম
নকশার মধ্যে আছে জামদানি নকশা, পুকুর নকশা, ঢেউ নকশা, যোগ নকশা, সাপা নকশা, তারা নকশা ইত্যাদি। আরও আছে টিক্কা, সিকি, আধুলি, নয়নতারা, আসমান, জ্যামিতিক নামের হরেক রকমের সব নকশা ও কারুকার্য। তবে অন্যান্য পাটি, যেমন নারিকেলপাতার পাটি, তালপাতার পাটি থেকে শীতলপাতার পাটি অনেক নরম হয় ও বেশ ঠান্ডা আরাম দেয়। তাই গ্রামে একে প্রাকৃতিক এসিও বলে কেউ কেউ।

ভাতের মাড়ে সেদ্ধ করার ফলে শীতলপাটি সাদা হয়, আরও নরম, মসৃণ হয়। নকশার জন্যে পাটিকে রঙিন করে তুলতে মাড়ের সঙ্গে নানারকম রং ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ডালপালা থেকে পাটি তৈরির জন্য ভাতের মাড়ে সেদ্ধ করার দরকার হয় না। ডালের তৈরি পাটি সাধারণত কিছুটা শক্ত হয় এবং লাল বর্ণের হয়ে থাকে। শীতলপাটির সব কাজ হাতে করা হয়, তাই এটি তৈরিতে বেশ শ্রম ও সময়ের প্রয়োজন হয়।‍‍`

 

ছন্দে-আখ্যানে শীতলপাটি
প্রতিটি বুননে আছে শীতলতা। তাই শীতলপাটি নিয়ে কবি-সাহিত্যকদের নান্দনিক ছন্দে, গীতিতে ও কবিতায় জড়িয়ে আছে নানা গল্প আখ্যান।

আরণ্যক বসুর বিখ্যাত প্রেমের কবিতা ‍‍‘মনে থাকবে‍‍’তে উল্লেখ রয়েছে এই শীতলপাটির কথা:

‍‍‘পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দুজন।‍‍’

অন্যদিকে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‍‍‘খাঁটি সোনা‍‍’ কবিতায় শীতলপাটিকে বাংলার মাটির সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন:

‍‍‘চন্দনেরি গন্ধভরা,
শীতল করা, ক্লান্তি-হরা
যেখানে তার অঙ্গ রাখি
সেখানটিতেই শীতল পাটি।‍‍’

শীতলপাটির নকশা, আয়তন, বুনন ও বেতের ওপর নির্ভর করে দামের তারতম্য হয়। শীতলপাটিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর হয়, তেমনি পাটিতে ব্যবহার করা নকশাগুলোর রয়েছে বাহারি সব নাম।

গরমে আরাম পেতে শীতলপাটি ব্যবহার করতে পারেন।

Link copied!