• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

স্বল্পভাষী হওয়া সফলতার অদ্ভুত গুণ


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২, ০৬:৫১ পিএম
স্বল্পভাষী হওয়া সফলতার অদ্ভুত গুণ

প্রতিভাবান ও সফল ব্যক্তির গুণাবলীর কথা চিন্তা করলেই সবার মনে কিছু গতবাধা শব্দ আসে।  যেমন পরিশ্রমী, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি। যদি বলি, এর বাইরেও একটি গুণ আছে। আর এই গুণ ছাড়া উপরের কোনওটি পুরোপুরি অর্জন দুরুহ্। এই গুণটি ছাড়া সফল মানুষ হওয়া শুধু কঠিনই নয় বরং বিফল হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। প্রতিভাবান ও সফল ব্যক্তির এই অদ্ভুত গুণটি হলো স্বল্পভাষী হওয়া। কেন স্বল্পভাষী মানুষ প্রতিভাবান ও সফল হয়, এর উত্তর জেনে নিলেই বুঝে যাবেন এর পেছনের কারণগুলো। 

স্বল্পভাষীরা তুলনামূলক বুদ্ধিমান হয়

দেখুন এক বাক্যে মনের ভাব, উদ্দেশ্য, প্রশ্নের উত্তর ইত্যাদি প্রকাশ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এখন এই কঠিন কাজটি বুদ্ধিমান মানুষের জন্য সহজ। যে ব্যক্তি কম কথা বলে তার জন্যেও কাজটি সহজ হয়ে যায়। ভাবনাকে বেশি শব্দ ব্যবহারে প্রকাশ করলে বুঝতে কঠিন হয়। কম শব্দে প্রকাশ করলে সহজেই ভাবনা প্রকাশ পায়। কাজেই এক বাক্যে ভাব প্রকাশ করার কৌশল কম কথা বলা ব্যক্তিদের মাঝে থাকা স্বাভাবিক। তাহলে বলা যায়, কম শব্দে যে নিজের কথাকে বোঝাতে পারে সে অবশ্যই বুদ্ধিমান। কেউ আপনাকে বুদ্ধিমান ভাবলে আপনার আত্নবিশ্বাস বাড়বে।

ধৈর্যশীল হওয়ায় সফলতা বেশি পায়

সফল হতে হলে অবশ্যই জ্ঞানার্জনে উত্সাহী হতে হয়। পড়ালেখার সঙ্গে আলাপ আলোচনাও  অনেক প্রয়োজন। যদি কোনও বিষয়ে স্বল্প জ্ঞান থাকে তাহলে কৌশল হলো জ্ঞানী মানুষের কাছ থেকে জেনে নেওয়া। স্বল্প জ্ঞান দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলে জ্ঞানার্জন দূরের কথা বরং মূর্খতার প্রকাশ ঘটে। কোনও বিষয়ে জানার থাকলে বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন মনযোগ দিয়ে চুপচাপ ধৈর্যের সঙ্গে শুনে বুঝে নিতে হবে। আর এই ধৈর্যশীল স্বল্পভাষী মানুষ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাবে।

সময়ানুবর্তিতা

সফল ব্যক্তি নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কীভাবে সর্বচ্চো ব্যবহার করা যায় সে দিকে স্বচেষ্ট থাকে। স্বল্পভাষী মানুষ অযথা কথা বলে সময় নষ্ট করে না। উত্পাদনশীল কাজে ও চিন্তায় স্বল্পভাষী মানুষ তাদের সময় ব্যয় করে।

কাজেই আত্মপ্রকাশ

নামে বা কথায় একজন মানুষ কতটা সফল হতে পারে? তাছাড়া, এ ধরনের সফলতার স্থায়ীত্বই বা কত দিনের? সমাজ বা মানুষের কল্যানে কোনও কাজ ব্যক্তিকে অমর করে রাখে। বেশি কথায় সময় নষ্ট না করে স্বল্পভাষী ব্যক্তি কাজের জন্য সময় বের করে রাখে। স্বল্পভাষী ব্যক্তি শুধু কথায় তার উদ্দ্যেশ্য, ভাবনা, পরিকল্পনা সীমাবদ্ধ করে রাখেন না। বরং তা বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারে।

প্রতিভাবান হয় স্বল্পভাষীরা

কম কথা বলা ব্যক্তিরা বেশী প্রতিভাবান হয়। দেখুন আপনার সামনে বসা ব্যক্তি অনরগল বকবক করে যাচ্ছে, কেন জানেন? কারন আপনি ভালো শ্রোতা। সেই সঙ্গে আপনি একজন মিতভাষীও। অপরের কথা চুপচাপ থেকে শুনে বক্তব্যের সারমর্ম, উদ্দেশ্য ও অর্থ বোঝা কঠিন প্রতিভার কাজ। কথার মাঝে কথা না বললে সামনের ব্যক্তি গুছিয়ে বলার সুযোগ পায়। তবে  আপনি চুপচাপ আছেন বলে অন্যজন ভাববে না যে আপনি একজন মুর্খ ব্যক্তি। চুপ থেকে অন্যের দুখের অংশীদার হওয়া মুর্খতা নয়। বরং বুদ্ধিমান মানুষের গুণাবলী। আপনি সক্রিয়ভাবে  শোনেন বলে তিনি বলতে ভালোবাসেন। বক্তাকে বুঝতে পারছেন কারন আপনি বুদ্ধিমান। আর এজন্যই আপনার যেকোনও মন্ত্যব্যের দাম বক্তা দিচ্ছে।

ঝামেলামুক্ত জীবন

গল্প গুজব করে সময় কাটানো যেমন আনন্দের। তেমনি কথায় কথায় মনমালিন্যও অনেক হয়। সল্পসময়ে কাজের কথাটি বলে নিজ প্রয়োজনে আত্ননিয়োগ করেন স্বল্পভাষী ব্যক্তিরা। এতে অনেকটাই ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। এখন বলা যায় মৃদু ভাষী সহজে কোনও ঝামেলায় জড়ায় না। তাই তাদের শত্রু কম থাকে। মানসিক শান্তি থাকে। তাই মানসিক অশান্তির চেয়ে প্রশান্তির কামনায় কম কথা বলাই শ্রেয়।

বন্ধুবাৎসল

কম কথনে বন্ধু ভাগ্য প্রসন্ন হয়। গল্প গুজব জমে বুদ্ধিমানের সঙ্গে। সে সঙ্গে ভালো একজন শ্রোতা সাথে থাকলে তো অনেক কথাই হয়। স্বল্পভাষী ব্যক্তি বুদ্ধিদিপ্ত হওয়ায় সহজেই তার বন্ধু সংখ্যা বেশি হয়। কারণ তারা ভাব প্রকাশে গোছানো হয়। তাই বাচাল ব্যক্তির বিপরীতে কম কথা বলা ব্যক্তি অধিক সহজবোধ্য ও প্রশান্তিময় হবে।

বিশ্বাসযোগ্যতা

সফলতা একটি অভ্যাস। স্বল্পভাষী ব্যক্তি কাজে অনেক সময় দিতে পারে। যত কাজে সময় দেওয়া যায় ততই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সফল ব্যাক্তি কাজে ব্যস্ত থাকে। অহেতুক  আলাপ আলোচনা করার ফুর্সত নাই তার। তাছাড়া কম কথা বলা ব্যক্তিদের মাঝে নির্জনতার আকাঙ্ক্ষা বেশি দেখা যায়। কাজেই আপনার তথ্য স্বল্পভাষী মানুষের কাছে নিরাপদে গচ্ছিত থাকবে।

আত্নমর্যাদা

কম কথা বলা ব্যক্তিরা তর্কে জড়ায় না। আবার বেফাস মন্তব্য করে বিতর্কের কারণ হওয়ার চেয়ে সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলে। মৃদুভাষী ব্যাক্তি আত্নমর্যাদাকে প্রাধান্য দেয়। অন্যকেও সম্মান দেখায়। ব্যস্ত জীবনে অযথা ঝামেলা এড়িয়ে নির্জনে সফলতার মালা গাথা মৃদুভাষী ব্যাক্তির স্বভাব।

কথা বলতে কে না পছন্দ করে। কথায় সম্পর্ক, কথায় উন্নয়ন কথায় কত কিছু। তবে মনে রাখতে হবে কথায় অনর্থকও কিন্তু হতে পারে। অযথা কথনের পরিবর্তে স্বল্প কিন্তু কার্যকরী কথায় সফলতা ও প্রতিভার বিস্ফোরণ প্রশান্তিময় হয়। যা সকলের কাম্য।

Link copied!