• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর বিষয়ে ১৪টি ভুল ধারণা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২, ০৪:৩২ পিএম
শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর বিষয়ে ১৪টি ভুল ধারণা

শিশু জন্মের পর অন্তত ৬ মাস মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। মায়ের দুধ শিশুকে পরিপূর্ণ পুষ্টির যোগান দেয়। তবে এই সময়ে মায়েদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ভুল ধারণা হয়ে থাকে। বাড়ির বড়দের পরামর্শ কিংবা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্বিধার কারণে এসব ভুল ধারণা হয়। যা থেকে ভয়ভীতির সৃষ্টি হয় নতুন মায়েদের মধ্যে। এই কারণেই এমন ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদনে শিশুকে মায়ের দুধ পান নিয়ে ১৪টি ভুলে ধারণার কথা তুলে ধরেছে। চলুন জেনে আসি সেই ভুল ধারণাগুলো কী কী।

শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো সহজ

শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো খুব সহজ নয়। শিশুকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর জন্য সময় লাগে। এই কাজটি সঠিকভাবে করতে মা ও শিশুর উভয়েরই অনুশীলন প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে,  শিশুর যখনই ক্ষুধা লাগবে তখনই তাকে দুধ খাওয়াতে হবে। এই কারণে যেখানেই যাচ্ছেন না কেন সন্তানকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে কিনা দেখে নিন। এই বিষয়ে অন্যদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

দুধ খাওয়ালে স্তনে ব্যথা হবেই

মায়েরা সন্তান জন্মের প্রথম কিছুদিন দুধ খাওয়ানতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। স্তনে ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু শিশুকে সঠিক অবস্থানে রেখে এবং ঠিকমতো স্তনের সঙ্গে যুক্ত রেখে দুধ খাওয়ানো গেলে, ক্ষত হওয়া বা ফুলে গিয়ে ব্যথা হওয়া এড়ানো যাবে। এই বিষয়ে কোনও সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞ বা দক্ষদের পরামর্শ নেওয়া যায়।

স্তন্যপানের আগে তা ধুয়ে নিতে হয়

শিশুকে দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন্য ধুয়ে নিতে হয়-এটা ভুল ধারণা। বরং ধুয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ শিশুরা জন্মের পর মায়ের শরীরের গন্ধ ও কন্ঠস্বরের সঙ্গে পরিচিত থাকে। পাশাপাশি স্তনে কিছু পদার্থ তৈরি হয় যার গন্ধ শিশুরা পায়। এতে এক ধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। যা শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।

শিশু ও মাকে আলাদা রাখতে হয়

মায়ের বিশ্রামের জন্য অনেকেই শিশুকে মা থেকে দূরে রাখেন। এটা ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, জন্মের পরপরই শিশুকে তার মায়ের সংস্পর্শে রাখতে হবে। একে ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ বলা হয়। মায়ের সংস্পর্শে রাখা, মায়ের গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খুঁজে পেতে সহজ হয়। মা একা শিশুকে নিয়ে না থাকতে পারলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সঙ্গে থাকতে পারেন।

শিশু স্তন্যপান করলে মাকে সাধারণ খাবার খেতে হবে

শিশু স্তন্য পান করলে মাকে সাধারণ খাবার খেতে হবে এটা ভুল ধারণা। নবজাতকের মাকেও সুষম খাবার খেতে হবে। শিশুরা মায়ের পেটে থাকাকালীনই খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব পড়ে। যা শিশুরা সহজেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। তবে যদি কোনো খাবারের খারাপ প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ছে বলে মনে হলে শিশু বিশেষজ্ঞের  পরামর্শ নিন।

ব্যায়াম দুধের স্বাদ পাল্টে ফেলবে

ব্যায়াম দুধের স্বাদ পাল্টে ফেলবে এটা ঠিক নয়। বরং ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী। স্তনদানকারী মায়েরাও ব্যায়াম করতে পারেন। এতে দুধের স্বাদ পাল্টে যাওয়ার কোনও প্রমাণ নেই।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই দুধ না খাওয়ালে আর পারা যাবে না

জন্মের পর এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা সহজ। এই সময়ে শিশুরা বেশি আগ্রহী থাকে। তবে যদি জন্মের পরপরই শিশুকে দুধ খাওয়াতে না পারেন, পরে আপনার অবস্থা অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব দুধ খাওয়ানো শুরু করুন। মায়ের ত্বকের সঙ্গে শিশুর ত্বকের সংস্পর্শ লাগলে দুধ খাওয়া দ্রুত শিখবে।

বুকের দুধ খাওয়ালে ফর্মুলা ফুড দেওয়া যাবে না

মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ফর্মুলা খাওয়ানো যাবে না এটা ঠিক নয়। ফর্মুলা ফুডও খাওয়ানো যাবে। এক্ষেত্রে শিশুর ফর্মুলা বা সম্পূরক খাবারের বিষয়ে সঠিক, পক্ষপাতহীন তথ্য থাকতে হবে। তবে বুকের দুধ নিয়মিত খেলে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে। এর ফাঁকে ফাঁকে আপনি ফর্মুলা ফুড খাওয়াতে পারেন। এ বিষয়ে সঠিক পরামর্শের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন।

অনেক মায়েরই শরীরে পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ থাকে না

প্রায় সব মায়ের শরীরে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয়। তাই অনেক মায়েরই শরীরে পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ থাকে না এটা ভুল ধারণা। শিশুকে কতখানি সঠিকভাবে মায়ের বুকে সংযুক্ত করা গেল, কত ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো হচ্ছেএবং শিশুটি প্রতিবার কত ভালোভাবে মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে পারছে - এসবের উপর নির্ভর করে মাতৃদুগ্ধ তৈরি হয়। তাই এই সময় মায়েদের  যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও পানীয় পান করতে হবে।

অসুস্থ মায়েরা দুধ খাওয়াতে পারবেন না

মায়েরা অসুস্থ হলেও দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে এই সময় মায়ের চিকিৎসা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও যথাযথ খাবারও চালিয়ে যেতে হবে। মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শিশুর শরীরেও সঞ্চারিত হয়। যা নবজাতক শিশুর জন্য ভালো। 

দুধ খাওয়ানোর সময় ওষুধ সেবন করা যায় না

মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কোনও ওষুধ সেবন করা যায় না এটাও ভুল ধারণা। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানো যাবে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় ও মাত্রা মেনে খাওয়াবেন। তবেই শিশুরা ভালো থাকবে।

বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা মায়ের সঙ্গে আঁকড়ে থাকে

শিশুরা মায়ের সঙ্গে আঁকড়ে থাকার সঙ্গে বুকের দুধ খাওয়ানোর তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। শিশুরা আলাদা। তারা তাদের অভ্যাসের কারণে এমনটা করতে পারে। মনে রাখবেন, মায়ের দুধ শিশুদের সবচেয়ে ভালো পুষ্টি যোগায়। মস্তিষ্ক গঠনেও তা গুরুত্বপূর্ণ। এতে মা শিশুর বন্ধন জোরালো হয়।

এক বছর পার হলে শিশুকে দুধ ছাড়ানো যায় না

এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যায় না এটা ভুল ধারণা। দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানোমঙ্গলজনক। প্রত্যেক মা ও শিশুর জন্যই এটি উপকারী। 

কাজে ফিরলে শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে

অধিকাংশ মা কর্মস্থলে ফিরে গেলেই বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। এটা ঠিক নয়। বরং আগে দেখুন আপনার কর্মস্থলের নিয়ম-কানুন কেমন। অফিসে কাজের মাঝে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ও সুযোগ থাকলে তা করতে পারেন। এছাড়াও পরিবারে কেউ যদি ওই সময় আপনার কর্মস্থলে শিশুটিকে নিয়ে আসতে পারেন কিংবা বোতলে সংগ্রহ করে আপনি তা বাসায় পাঠাতে পারেন তবে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও শিশুর জন্য বিকল্প কোনও খাবারের ব্যবস্থা করলেও বাড়ি ফিরে অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাবেন।

Link copied!