নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু। শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে। স্বপ্নের এই সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণে দীর্ঘ দিন সরাসরি যুক্ত ছিলেন তরুণ প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল। সেতু নির্মাণের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
………………………………………………………………………………………………………………….
সংবাদ প্রকাশ : দীর্ঘ দিন ধরে আপনি পদ্মা সেতুতে কাজ করেছেন। আপনার পথচলাটা কেমন ছিল?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল : আপনারা জানেন পদ্মা নদী পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী। আমরা যখন পাইলিংয়ের কাজ শুরু করি, তখন থেকে চ্যালেঞ্জ শুরু হয়। নদীর মূল চ্যানেল বা পানি প্রবাহের জায়গায় পানির স্রোত তীব্র থাকায় বার বার ডিজাইন চেঞ্জ করতে হয়েছে। ঠিক তখন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের মূল চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। প্রথমে ডিজাইনে প্রত্যকটা পাইয়ারের জন্য ৬টা পাইলিং করা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু খরস্রোতার কারণে সেখানে ৭টি করতে হয়েছে। পাইলিং জটিলতায় ধীর গতি পায় কাজে। পাইলিং শেষ হয়ে গেলে সেতুর মূল কাজে গতি আসে।
সংবাদ প্রকাশ : পদ্মা সেতুতে কাজ করতে গিয়ে কখনো ভয় বা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : বাংলাদেশ বৃষ্টিপ্রবণ দেশ। হঠাৎ করে কালবৈশাখী জড় ও অতিবৃষ্টিতে নদী ভাঙন একধরনের ভয় সৃষ্টি করেছে। আলহামদুলিল্লাহ, সেটাও আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
সংবাদ প্রকাশ : কাজ শুরুর পর করোনা শুরু হয়, তখন আপনারা কিভাবে সমন্বয় করেছেন?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : চীনা নাগরিকেরা দেশ থেকে চলে যায়। তারা চলে যাওয়ায় বাংলাদেশি অনেক শ্রমিক ভয়ে চলে যায়। ঠিক ওই সময় আমাদের মতো তরুণ প্রকৌশলীরা শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছে। তারপরেও কাজ থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্য।
সংবাদ প্রকাশ : আপনারা তো বিদেশি প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : বিদেশি প্রকৌশলীরা অনেক সহযোগী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। আমরা সবাই মিলে দারুণ একটা সময় কাটিয়েছি।
সংবাদ প্রকাশ : পদ্মা সেতুতে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, তা কি পর্যাপ্ত বলে মনে করেন?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : হ্যাঁ। কেননা এটি একটি বহুমুখী প্রকল্প। দ্বিতল এই সেতুতে একই সঙ্গে রেল ও গাড়ি চলবে। সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা পর্যাপ্ত। এখন আমরা সাধারণ মানুষের সচেতনতার ওপর নির্ভর করবে বাকিটা।
সংবাদ প্রকাশ : অতি ভারি গাড়ি চলাচলে ওজন পরিমাপক যন্ত্রের প্রয়োজনীতা আছে কিনা?
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : আমি মনে করি ব্যয়বহুল প্রকল্পে ওজন মাপার যন্ত্র থাকা দরকার। আপনারা জানেন, প্রত্যকটা স্প্যানের নিচে দশ হাজার টনের একেটা বিয়ারিং বসানো হয়েছে। ফলে ভারি যানবাহন চলাচলে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।
সংবাদ প্রকাশ : দীর্ঘ দিন এই সেতুতে কাজ করেছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
প্রকৌশলী ইব্রাহিম : স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে জড়িতে হতে পেরে আমি গর্বিত। আমার বাড়ি দক্ষিণ অঞ্চলে। আমরা বুঝি পদ্মা সেতু কতটুকু জরুরি ছিল। দক্ষিণাঞ্চল এতদিন অবহেলিত ছিল। এই সেতুর মাধ্যমে ওই অঞ্চলে একটা অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।
আপনার মতামত লিখুন :