কারাবন্দি মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া করাসহ আরও ৫টি দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আরও ৪টি অভিযোগের বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিবিসি জানায়, সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড হতে পরে।
সু চির বিরুদ্ধে আনা এক অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া করেছিলেন সুচি।
এর আগে অবৈধভাবে দু’টি ওয়াকিটকি রাখা ও করোনা বিধি-নিষেধ না মানার দায়ে সু চি-কে ৪ বছরের কারাদন্ড দেয় দেশটির সামরিক আদালত। তবে সু চির বিরুদ্ধে অন্য দু’টি মামলা ৪ বছরের সাজা ঘোষণা করা হলে সমালোচনার মুখে পড়ে সামরিক আদালত। পরে সু চির দুই বছরের শাস্তি মওকুফ করা হয়।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সু চি-কে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। তিনি নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সু চি-কে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির ক্ষমতায় বসেন জেনারেল মিং অন হ্লাইং।
অং সান সু চি নিপীড়নের মুখে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক প্রতীক। তিনি একজন বার্মিজ রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিক। যিনি শান্তিপূর্ণভাবে মিয়ানমারে সামরিক শাসনকে প্রতিহত করেছেন এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করেন।
অং সান সু চি, তার সমর্থকদের দ্বারা জনপ্রিয়ভাবে 'ড' নামে পরিচিত। ১৯৮৮ সালে মিয়ানমার তৎকালীন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে একাধিক বিক্ষোভ করছিল। সেই সময়ই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ওই সময়ে সু চি তার অসুস্থ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে মিয়ানমারে আসেন। কিন্তু পরে ন্যাশনাল লীগ অফ ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নামে একটি দলের নেতৃত্ব দেন। ধীরে ধীরে তিনি মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখ্য হয়ে উঠেন।
সু চি বার্মিজদের মধ্যেও জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। যা গণতন্ত্রের জন্য বিদ্রোহের দাবিকে দমন করার জন্য মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর একটি কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল। ১৯৯০ সালে এনএলডি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সু চি। ৮১ শতাংশ আসন জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত সামরিক বাহিনী ফলাফল বাতিল করে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে।
২০১২ সালে অং সান সু চি মায়ানমার পার্লামেন্টের একটি নিম্ন কক্ষের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং আইন প্রণেতা হিসেবে হাউস সেশনে যোগ দেন। যদিও একই বছর, নির্বাচনের পরে রোহিঙ্গা মুসলিম এবং শরণার্থীদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে অজ্ঞতার জন্য সু চি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হন।
২০১৫ সালে, সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে সু চি-র নেতৃত্বে এনএলডি বিজয়ী হয়েছিল। যদিও মিয়ানমারের সংবিধান তাকে তার পরিবারের বিদেশি নাগরিকত্বের কারণে রাষ্ট্রপতি হতে বাধা দেয়।
সু চি এখনও মিয়ানমারের প্রকৃত নেতা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। তার নতুন অফিসিয়াল উপাধি হলো স্টেট কাউন্সেলর। পাশাপাশি তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, বৈদ্যুতিক শক্তি ও শক্তি মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে সু চি জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থ প্রচার করে ভুয়া খবর দিয়ে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন, তার সরকার ইতোমধ্যেই রাখাইনের সব মানুষকে সর্বোত্তম উপায়ে রক্ষা করা শুরু করেছে।
অং সান সু চি ও তার রাজনৈতিক দলের অন্যান্য সদস্যদের আটকের পর দেশটিতে নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। ক্ষমতা দখলের একদিন পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আটক আঞ্চলিক ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অধিকাংশকে মুক্তি দেয়। কিন্তু স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উ উইন মিন্টের মুক্তির বিষয়ে বরাবরই চুপ রয়েছে দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ।