• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোই সবচেয়ে সুখী


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২২, ০৮:০৭ পিএম
ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোই সবচেয়ে সুখী

একবার ভাবুন তো, বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষ যদি উপাসনালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে কেমন হবে! এবং তারা যদি সৃষ্টিকর্তার  প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে? সমাজে কি তখন হতাশা নেমে আসবে? অথবা সমাজ থেকে কি সুখ-শান্তি বিলুপ্ত হবে?

জাতিসংঘ থেকে প্রকাশিত বিশ্ব সুখ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ফিনল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ। একটানা পাঁচ বছর এই অবস্থানে আছে দেশটি। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, নরওয়ে, ইসরায়েল ও নিউজিল্যান্ড।

সেরা সুখী এসব দেশের কেউই ধর্মীয়ভাবে কট্টর নয়। তাদের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ, আর কেউ কেউ ন্যূনতম ধার্মিক। অবশ্য এসব জাতি একদিনে ধর্মনিরপেক্ষ হয়নি। দেশগুলোকে কয়েক দশক বহু চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ধীরে ধীরে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা বেড়েছে, সৃষ্টিকর্তায় তারা আস্থা হারিয়েছেন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, নরওয়েতে বর্তমানে কেউ স্রষ্টায় বিশ্বাস করেন না, যা একসময় প্রকট ছিল। তাদের প্রতিবেশী দেশ সুইডেন। সুইডিশ নাগরিকদের উপাসনালয়ে যাওয়ার উপস্থিতি অনেক কম। ৬৫ শতাংশ সুইডিশের সৃষ্টিকর্তায় আস্থা নেই। ডেনমার্কের প্রায় অর্ধেক নাগরিকের স্রষ্টায় বিশ্বাস নেই।

নিউজিল্যান্ডেও ২০০১ সালে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। তখন দেশটির ৩০ শতাংশ লোক দাবি করেছিল, পৃথিবীতে কোনো ধর্ম নেই, যা বর্তমানে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

৭০-এর দশকে দেখা গেছে, নেদারল্যান্ডের ৪০ শতাংশ জনগণ নিয়মিত উপাসনালয়ে যেতেন, যা বর্তমানে অনেক কমে এসেছে। দেশটির ১৫ শতাংশ মানুষ এখন নিয়মিত উপাসনালয়ে যান। নেদারল্যান্ডের বেশিরভাগ মানুষ দাবি করছেন, তাদের কোনো ধর্ম নেই। আইসল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন, এই পৃথিবী কোনো স্রষ্টার সৃষ্টি নয়।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, অস্তিত্বগত বিশ্বাসের বিপর্যয়ে পড়ার চেয়ে এমন নাটকীয়ভাবে ধর্মীয় সম্পৃক্ততা কমে যাওয়াই উত্তম। এতে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সংবেদশীলতা তৈরি হবে।

অবশ্যই সুখ একেবারেই ব্যক্তিগত ধারণা। গবেষণায় কিছু বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনা করে সুখের তালিকা তৈরি হয়। যেমন : সুস্থতা, প্রশান্তি ও শান্তির প্রতি অনুভূতি। তবে আনন্দিত হওয়া মানেই কিন্তু সুখী নয়। বরং এটি একটি সাধারণ অনুভূতি।

ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলো অবশ্যই সুখী দেশের তালিকায় শীর্ষে থাকার মতোই। দেশগুলোর জনগণ বিশ্বের সর্বোচ্চ মাত্রার স্বাধীনতা ভোগ করে। এসব দেশে বৈষম্যের পরিমাণ সর্বনিম্ন। তারা বিনামূল্যে বা উচ্চ ভর্তুকিযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা, শিশুযত্ন, বয়স্ক ভাতা ও যত্ন, শিক্ষা ও আরও অনেক সামাজিক সুবিধা ভোগ করে। তাদের সমাজ অত্যন্ত নিরাপদ ও মানবিক। কিন্তু এসব জাতির ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে সুখের সম্পর্ক আসলে কী? ধর্মনিরপেক্ষতার কারণে তারা সুখী, পরিসংখ্যানগতভাবে এ দাবি চোখ বন্ধ করে করা যায় না। কিন্তু যারা অবিরাম দাবি করে, ধর্ম হলো একটি সুস্থ ও সুখী সমাজের উপাদান, তারা সে অবস্থান পরিষ্কারে ব্যর্থ। বলা হয়ে থাকে, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সম্পৃক্ততা ম্লান হয়ে গেলে তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তবে ফিনল্যান্ড ও নরওয়ের মতো দেশগুলো কিন্তু উল্টো সাক্ষ্যই দিচ্ছে। ধর্ম তাদের সুখ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো সহায়তা করছে না, বাধাও দিচ্ছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত বিশ্ব সুখ প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোই সুখের শীর্ষে। তারা ধারাবাহিকভাবে এ অবস্থান ধরে রেখেছে। নাগরিকদের উন্নতির জন্য ধর্মের প্রয়োজন, এটা যে সত্য নয় তা প্রমাণিত।

যেসব রাষ্ট্রের মানুষ উচ্চস্তরের সুখে আছেন, তার পেছনে যদিও শুধু ধর্ম নয়, আরো কারণ রয়েছে। নর্ডিক বিশ্বে শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা বলয় ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নারীদের জন্য সমান অধিকার, উচ্চ শিক্ষিত নাগরিক, পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সুসজ্জিত পার্ক, সমৃদ্ধ শিল্পকলা, আর খুন কিংবা সহিংসতার হার অনেক কম।

 

সূত্র : অনলি স্কাই

Link copied!