পূর্ব ইউরোপে চলমান উত্তেজনার মাঝে ইউক্রেনের তিন দিকে ব্যাপক সামরিক সৈন্য সমাবেশ করেছে রাশিয়া।
উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ইউক্রেনের প্রতিবেশি বেলারুশ, ক্রিমিয়া উপদ্বীপ এবং পশ্চিম রাশিয়া সীমান্তে সৈন্য ও ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে মস্কো। এর ফলে ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের শঙ্কা আরও জোরাল হয়েছে।
মহাকাশবিষয়ক প্রুযক্তি কোম্পানি ম্যাক্সারের তোলা উপগ্রহ চিত্রে ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়ার নতুন সামরিক তৎপরতা ধরা পড়েছে।
পশ্চিম রাশিয়া
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার পূর্বে পশ্চিম রাশিয়ায় সৈন্যবহর এবং সামরিক সরঞ্জামের বিশাল একটি চালান পৌঁছেছে। পশ্চিম রাশিয়ার কুর্স্ক প্রশিক্ষণ এলাকায় সৈন্যদের ব্যাপক উপস্থিতি উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে। ওই এলাকা আরও সামরিক সক্ষমতা মোতায়েন অব্যাহত রয়েছে।
গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন-রাশিয়ার উত্তেজনা চলছে। ইউক্রেন সংকট প্রশমিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। পরে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনে কোনও ধরনের সামরিক আগ্রাসন চালানো হলে রাশিয়াকে অত্যন্ত দ্রুত এবং কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন জো বাইডেন।
মস্কো ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা করছে বলে পশ্চিমারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা উসকানিমূলক জল্পনা বলে দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, এ ধরনের জল্পনা সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশটিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সে জো বাইডেন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ‘ব্যাপক মানবিক দুর্ভোগ’ তৈরি করবে। তবে পশ্চিমারা কূটনৈতিকভাবে এই সংকটের অবসানে বদ্ধপরিকর এবং অন্যান্য সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্যও সমানভাবে প্রস্তুত।
ইউক্রেনের সামরিক জোটে যোগদান নিষিদ্ধ এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারে রাশিয়ার দাবির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা এই সামরিক সন্তোষজনকভাবে সাড়া দেয়নি বলে অভিযোগ করেন পুতিন।
পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক শীর্ষ সহযোগী ইউরি উশাকভ বলেছেন, কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বাড়লেও সম্প্রতি সেই পরিস্থিতিকে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বেলারুশ
ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত বেলারুশের গোমেলের কাছে জায়াব্রোভকা বিমানঘাঁটিতে নতুন করে সৈন্য, সামরিক যান এবং হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এছাড়া ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৪৫ কিলোমিটারেরও কম দূরের রেচিৎসা শহরের কাছে সৈন্য এবং একাধিক সামরিক ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্রিমিয়া
১০ ফেব্রুয়ারি ক্রিমিয়ায় অক্টিয়াব্রস্কয় বিমানঘাঁটিতে নতুন করে বড় ধরনের সৈন্যবহর ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করতে দেখা গেছে। সিমফেরোপলের উত্তরে পরিত্যক্ত এই বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ার ৫৫০টিরও বেশি সামরিক তাঁবু এবং শত শত যানবাহন পৌঁছেছে।
এছাড়া সম্প্রতি দোনুজলাভ হ্রদের তীরের নোভোজারনয়ে এলাকায় নতুন করে আরও কিছু সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছেছে। নোভোজারনয়ের কাছাকাছি এলাকায় ব্যাপক গোলাবারুদ মোতায়েন এবং সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখা গেছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম উপকূলের স্লাভনে শহরের কাছে একটি নতুন সামরিক স্থাপনা দেখা গেছে।
সূত্র : সিএনএন, এএফপি