• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
হামলার ২২ বছর

কী ঘটেছিল ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩, ০৫:১৮ পিএম
কী ঘটেছিল ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর
নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরের দৃশ্য। ফাইল ছবি

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে আগে পার্ল হারবারে আমেরিকার নৌবাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছিল জাপানের বিমানবাহিনী। তারপর থেকে ৯/১১ হামলাই আমেরিকার মাটিতে হওয়া সবচেয়ে মারাত্মক হামলা।

২২ বছর আগে আমেরিকার সেই সন্ত্রাসবাদী হামলার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, তা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। ইতিহাসের পাতায় সেই ঘটনা পরিচিত ‘৯/১১ হামলা’ নামে।

১১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে কালো দিন হিসাবেই মনে রেখেছেন আমেরিকার মানুষ। প্রতি বছর দিনটিতে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামেন। হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফুল-মালা-মোমবাতি নিয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চত্বরে হাজির হন তাঁরা।

কিন্তু কীভাবে সেই হামলার ছক কষা হয়েছিল? নেপথ্যে কে বা কারা ছিলেন? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায়!

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার বুকে মোট চারটি বিমান হামলা চালিয়েছিল আল-কায়দার জঙ্গিরা।

ঘটনার দিন সকালে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার ১৯ জন জঙ্গি আলাদা আলাদা বিমানবন্দর থেকে চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে। এরপর বন্দুক, বোমা, গোলাবারুদ সঙ্গে নিয়ে চারটি দলে ভাগ হয়ে চেপে বসে সেই বিমানগুলিতে।

প্রথম দুটি বিমান নিয়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ‘টুইন টাওয়ার্সে’ হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই সময়ে বিশ্বের পাঁচটি সবচেয়ে উঁচু বহুতলের মধ্যে দুটি ছিল টুইন টাওয়ার্স।

প্রথম বিমানটি সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর মিনারের ৯৩ তলা থেকে ৯৯ তলার মধ্যে গিয়ে ধাক্কা মারে।

ঠিক সাত মিনিট পর অর্থাৎ, ৯টা ৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি নিয়ে আঘাত হানে জঙ্গিরা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ মিনারের ৭৭ তলা থেকে ৮৫ তলার মধ্যে আছড়ে পড়ে সেটি।

এই দুই বিমানে মোট ১০ জন জঙ্গি ছিল। দুটি বিমানে মোট যাত্রী এবং বিমানের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪৭। এই দুই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল মোট ২,৭৬৩ জনের। এরপর দুই ঘণ্টার মধ্যে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ‘টুইন টাওয়ার্স’ ধুলোয় মিশে যায়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চত্বরের আরও একটি ৪৭ তলা ভবন ভেঙে পড়ে।

অন্য দুটি বিমান নিয়ে দেশের রাজধানী ওয়াশিংটনে হামলা চালানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা। তৃতীয় বিমানটিতেও ছিল পাঁচ জঙ্গি। যাত্রী এবং বিমানের সদস্যদের মিলিয়ে ৫৯ জন বিমানটিতে ছিলেন।

৯টা ৩৭ মিনিটে বিমানটি গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টিতে আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের একটি দেওয়ালে। এই ঘটনায় মোট ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার পর তা পেনসিলভেনিয়ার একটি গ্রামে আছড়ে পড়ে ১০টা ৩ মিনিটে। সেই বিমানটিতে চার জন জঙ্গি ছিল। তাদের পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছিল আরও ৪০ জনের। এই চার জঙ্গি হামলায় সব মিলিয়ে ৯৩টি দেশের প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আহতও হয়েছিলেন বহু মানুষ।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তা আমেরিকার অর্থনীতি এবং বিশ্ববাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। প্রায় সাত-আট মাস ধরে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চত্বর মেরামত করা হয়।

এর পর ২০০৬ সালে আবার ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় নিহতদের স্মরণে সেই জায়গায় বেশ কয়েকটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে।

৯/১১ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছিল আল-কায়দা। মনে করা হয়, এই হামলার নেপথ্যে মূল মাথা ছিল আল-কায়দা প্রধান ওসামা-বিন-লাদেনের। তবে অপর এক আল-কায়দা নেতা খালিদ শেখ মহম্মদকে ‘৯/১১ হামলার প্রধান স্থপতি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল আমেরিকা।

খালিদকে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর থেকে তিনি আমেরিকার গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দি।

লাদেন প্রাথমিকভাবে হামলার দায় অস্বীকার করলেও, ২০০৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে একটি অডিয়ো কথোপকথন প্রকাশ্যে আসে। সেই অডিয়োতে লাদেন ৯/১১ হামলায় আল-কায়দার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

হামলার সঙ্গে তার সরাসরি যোগসূত্রও অডিয়োতে স্বীকার করতে শোনা যায় লাদেনকে। তবে আমেরিকা কখনওই সরকারিভাবে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দায় লাদেনের উপর চাপায়নি।
তবে তানজানিয়ার দার এস সালাম এবং কেনিয়ার নাইরোবিতে থাকা আমেরিকার দূতাবাসে হামলা চালানোর জন্য এফবিআই-এর ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিলেন লাদেন।

এর পর থেকে আমেরিকার গোয়েন্দারা ১০ বছর ধরে লাগাতার খোঁজ চালাতে থাকে লাদেনের। ২০১১ সালের ১মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর গুলিতে লাদেনকে খতম করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সূত্র-আনন্দবাজার।

Link copied!