পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউই ও মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফ্রেডির’ আঘাতে মৃতের সংখ্যা ৩০০ জন ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যার আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত আফ্রিকান দেশগুলোর কর্মকর্তারা।
কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মালাউইয়ের বাণিজ্যিক রাজধানী ব্লানটায়ারে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও প্রাণহানির সংখ্যা নিশ্চিত হতে মোজাম্বিকের কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকদিন সময়ও লাগছে।
বুধবার মোজাম্বিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাম্বেজিয়া প্রদেশেই ফ্রেডির আঘাতে অন্তত ৫৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই সংখ্যা তাদের আগের হিসাবের দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে মালাউই কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ২২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত কয়েক শতাধিক এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
মোজাম্বিকে দ্বিতীয় দফায় আছড়ে পড়ার আগে ক্রান্তীয় ঝড়টি মাদাগাস্কার আর মোজাম্বিকে আরও ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটায়। টানা বর্ষণ ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় ব্যাঘাতও ঘটাচ্ছে।
গত সোমবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। উদ্ধারকর্মীরা কাদায় চাপা পড়া জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। অবিরাম বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাসের কারণে কিছু এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে, এই দুর্যোগে মালাউইয়ে কলেরার প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে।
দেশটির দুর্যোগ ও ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির আঘাতে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার ছোট দেশটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ১০ জেলায় দুর্যোগ পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়েছে।
মালাউইয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার চার্লস কালেম্বা জানিয়েছেন, দক্ষিণ অংশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অনেক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বহু রাস্তা ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দৃষ্টিসীমা শূন্যে নেমেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেটওয়ার্ক না থাকার সমস্যাগুলোও আরও প্রকট হয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র পিটার কালায়া বলেন, “আমাদের নদীর পানি উপচে পড়ছে। পানিতে মানুষ ভাসছে, আমাদের বাড়িঘর ধসে পড়ছে।”
মালাউইয়ের প্রেসিডেন্ট লাজারাস চাকভেরা ১৪ দিনের শোক পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে দেড় মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
ফেব্রুয়ারির শেষদিকে প্রথম আছড়ে পড়ার পর ফ্রেডি গত সপ্তাহে ফের আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে তাণ্ডব চালায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মহাদেশটিতে আঘাত হানা অন্যতম প্রাণঘাতী এই ঝড়কে দক্ষিণ গোলার্ধে রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় বলা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :