• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আহা! জীবন


রাজীব কুমার দাশ
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২, ০৫:২৯ পিএম
আহা! জীবন

ছিপছিপে গড়ন। নিতম্ব কলসের মতন। পেছনের চুলগুলো উড়ে চলা বালিহাঁসের ঝাপটা পাখার মতন। স্বর্লোক থেকে মর্ত্যলোক দৃষ্টি বিমানে উড়ে চলেছে তরুণীর দুষ্টু হাসি, আহা! খুনি সুন্দর দুটি নয়ন। গোলাপি লিপিস্টিকের মকমল তুলতুলে কম্বলে ঘুমিয়ে আছে, হৃদয়ের মতো পুরু মোটা হস্তিনী রকমের এক জোড়া ঠোঁট, ফেসবুকে মেয়েটা সোফিয়া জাফরান। শর্ত চাপিয়ে তাকে ফলো করতে বলেন।

পৃথুল বন্ধ্যা হাসিতে সোফিয়া গুচ্ছ গুচ্ছ শর্ত দিয়ে বলেন :
১. আমাকে কেউ মেসেঞ্জারে নক দেবেন না।
২. আমাকে বুঝতে না পেরে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে অপমানিত হলে দায়ী নই।
৩. হৃদয়ের দায়িক আদালতে মামলা করলে ঝুলে যাবেন।
৩. আমাকে গিফট পাঠানোর চেষ্টা করলে নির্ঘাত ব্লক খাবেন।

জন্মসূত্রে স্ববিরোধী মানব মন। মানব মনকে মোসাদ, কেজিবি, কিম জন-উং পিজিয়ন টর্চার, সিআইএ, এম সিক্সটিন হয়ে শত্রুরাষ্ট্রের টর্চার সেলে একটানা বছর দশেকও যদি ‘নির্লোভ হওয়া আবশ্যক, স্বীয় জিহ্বা শাসনে রাখার দাসখত দলিলে সই নেওয়া হয়; তবু শারমেয় লেজের মতো, এ উপমহাদেশের মানু্ষ বাঁকাই থাকবে, থেকেছেও। কেউই কোনো দিন সোজা পথে হাঁটেনি।

‘হোমো সেপিয়েন্স’ জ্ঞানী বৈজ্ঞানিক নামের প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী এ প্রাণিকুল সুবিচার করতে পারেনি। এ প্রাণীটিকে যখন বলা হয়; এদিকে এসো না, সে মিসাইল বেগে দৌড়ে এসেছে। যখন বলা হয়েছে, প্লিজ! এদিকে তাকিও না, ‘আমার শরম লাগে’। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন!
চোখগুলো সারা বেলা কেউই বন্ধ করেনি। এ তল্লাটে ফার্মেসি ফুটপাত পত্রিকা দোকানে নিষিদ্ধ যৌনবর্ধক ট্যাবলেট সিরাপ, পিনে আটকানো যৌনগল্প চটি ম্যাগাজিনে আবাল বৃদ্ধ যখন নিষিদ্ধ থাকেন; তখনি ঘটে চরম বিপত্তি! আবাল বৃদ্ধ অন্য আইটেম কেনার ভান করে বাম-ডান তাকিয়ে দোকানির প্রহসন প্রহরে দ্বিগুণ দামে চুপিচুপি কিনে সরে যান।
এরপরে নাবালকটি সাবালক হয়ে পাকা বদমাশ হন; বুড়ো ভাম দাদুটা স্ট্রোক করে মরে যান। সবাই হাপিত্যেশ করে কেউ কেউ কান্নাকাটি করেন। সবকিছু উহ্য থেকে আসল রহস্য একমাত্র আবাল পাকা বদমাশ ও বুড়ো দাদুটা ভালো জানেন।

আবাসিক বাসা, হোটেল, দামি কটেজে পাকা সাবালক বদমাশ একসময় দাপিয়ে বেড়ান। চালু করেন রংবেরং চটকদার বিজ্ঞাপন।‘বাবু চাঁদনির কাছে এসো না, তোমারে
রানের চিপায় মারুম।’ 
‘কেয়া কসমেটিকস’ হালাল সাবানের বিজ্ঞাপনের মতো এককথায় এক লাফে অডিনারি চাঁদনির চাহিদা ফেসবুক সংস্কৃতি রাতারাতি বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
এই যে না বলা, না করা, নিষিদ্ধ সংস্কৃতি এ তল্লাটে রকেট সফলতার চাবিকাঠি।

বদ্বীপের সুবিধাবাদী হোটেল, কটেজ যৌন বাজারে প্রচলিত ছলনা বুলি ‘বাবু, বেশি চালাকি করো না, তোমারে রানের চিপায় মারুম।’ রক্ষিতা সংস্কৃতি কতজন পুরুষ বেশ্যা ধড়িবাজকে মারতে পেরেছে জানি না; তবে লাখো কোটি ধড়িবাজের মেটা ফেসবুকের নিষিদ্ধ চাঁদনি, বর্ষা, নিশিকন্যা, শীতল কন্যা, গ্ল্যামার কন্যা, ইঁচড়ে পাকা টিকটকার মানু, কানু, জানু, কানুর বউ সানু, ঝাড়ুদার জানুর বউ রেশমী বানু রানের চিপায় মারতে না পারলেও ঢের ফলোয়ারে বাঁধতে পেরেছেন।

‘নিষিদ্ধ’ শব্দটি গৃহপালিত। নিষিদ্ধ শব্দের প্রতি মানুষের দুর্নিবার দুর্নিমিত আকর্ষণ। কেউই এ শব্দ সুখে লালিত পালিত আমোদিত হননি—একবাক্যে বুকের পাটা নিয়ে বলবেন: এমন সুজন রসিকরাজ কমই আছেন। জনাকীর্ণ বিরোধিত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ শব্দ দেখার পরে, শোনার পরে উন্মত্ত জনতা যেভাবে চেতনা কিংবা প্রেস্টিজ সুঁড়সুঁড়ি অনুভব করে গণহারে তিমি মাছের মতো- তিরোধিত সাইনবোর্ড পেতে ঝাঁপিয়ে পড়েন; সে বিরল মানব তিমি দর্শন এ উপমহাদেশ ছাড়া পৃথিবীতে বিরল। প্রস্রাব না করার নিষিদ্ধ সাইনবোর্ড চিকা দেখে প্রস্রাবের সঙ্গে এ জনপদে একসঙ্গে পায়খানাও সেরে নেন।

অখ্যাত কোনো লেখকের বই যদি কোনো কারণে একবার নিষিদ্ধ হতে পারে; রাতারাতি এ বইয়ের চাহিদা বেড়ে আকাশছোঁয়া হয়ে যান। নিজের সুন্দরী বউ ফেলে অন্যের বউ শালীর দিকে ঝুঁকে পড়েন। নিষিদ্ধ অজাচার সম্পর্ক জেনে বউটা সারা জীবন হাপিত্যেশ করে দাসী মনে কান্নাকাটি করেন। সহজ-সরল বউটা মিথ্যের বেসাতি মনে একসময় হারিয়ে যান।

এ তল্লাটের অক্ষম পুরুষও মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সুন্দরী নারীর স্তন যোনি কল্পনা করে যান। পাপী নিষিদ্ধ মনে হারাম আরাম খেয়ে পেনাল কোডের সিংহভাগ ধারার অপরাধ সরব নীরবে করে উত্তরসূরি প্রজন্মের ওপর জগদ্দল কলঙ্কের দায় চাপিয়ে মলমূত্র মাখিয়ে যৌনকেশ ছেঁড়ার গল্প বলে পৃথিবী ছেড়ে ইতিহাসের ডাস্টবিনে ডুবে যান। তবু নিজে নিজে মনে করেন, ‘একমাত্র আমিই মহান।’

আহা! জীবন।

Link copied!