• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সিজার-পরবর্তী মায়ের যত্ন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩, ১১:৪১ এএম
সিজার-পরবর্তী মায়ের যত্ন

একজন গর্ভবতী নারীর সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় এবং তারপরেও শরীরের ওপর দিয়ে অনেক ধকল যায়। এর প্রভাব মায়ের ওপর শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও পড়তে পারে। তবে এই পরিবর্তন একেক মায়ের জন্য একেক রকম হতে পারে। চলুন জেনে নেবো প্রসূতি মায়ের যত্নে কী কী করা আবশ্যক—

সিজারের পর মায়ের শারীরিক যত্ন

কাজ ও বিশ্রাম

যদিও বাচ্চার কারণে বিশ্রাম নেওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।  সিজারের পর অন্তত প্রথম ৬ সপ্তাহ স্বাভাবিকভাবেই মাকে বিশ্রামে থাকতে হবে। এ সময় অন্যদের তার কাজে সাহায্য করতে হবে। অন্তত প্রথম ৬ সপ্তাহ থাকতে হবে বিশ্রামে। যদিও এটা বলার চাইতে করাটা অনেক কঠিন। বাচ্চার কারণে বিশ্রাম নেওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চার যত্নের কাজে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন। তবে শুধু শুয়ে বসে সময় কাটালেই চলবেনা। সিজারের সাধারণত চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই মাকে বিছানা থেকে ওঠে বাথরুমে যেতে উৎসাহিত করা হয়। এতে ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি সেরে  উঠতে সাহায্য করে।

খাবার
প্রসবের পর মায়ের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি দরকার হয়। এই অতিরিক্ত ক্যালরি বুকের দুধ তৈরির জন্য প্রয়োজন হয়। তাই এ সময় মাকে সঠিক মাত্রায় সুষম খাবার খেতে হবে। এ সময় মায়ের দেহে পানির প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় ও ঘনঘন পিপাসা পায়। মাকে সব সময় পিপাসা পেলেই প্রচুর পানি পান করতে হবে।

কাটা স্থানের যত্ন
সিজারের ক্ষেত্রে কাটা স্থানের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন। যদি কাটা স্থানটি কাপড়ের সাথে ঘষা লাগে তবে এর ওপর গজ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে নিতে পারেন। ঢোলা, আরামদায়াক এবং সুতির কাপড় পরার চেষ্টা করুন। কাটা স্থানে ইনফেকশন হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখুন। যদি ক্ষতস্থান লাল হয়ে যায় বা বেশি ব্যথা হয় তবে ডাক্তারকে জানান।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুধু বাচ্চার জন্যই উপকারই না, এটা মায়ের জন্যও অনেক উপকারী। যেসকল মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ওজন অন্য মায়েদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঝড়ে যায়। কারণ বুকের দুধের মাধ্যমে বাচ্চাকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দিতে গিয়ে মায়ের শরীর থেকে অনেক বেশি ক্যালরি ক্ষয় হয়। যার ফলে ওজন ঝড়ে যেতে শুরু করে। এজন্য শুধু জন্মের প্রথম ছয় মাসই নয়, বরং এরপরও বাচ্চাকে অন্তত এক বছর পর্যন্ত নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।

যেসব কাজ এড়িয়ে চলতে হবে
সিজারের পর কিছু কিছু কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। সিজারের পর ক্ষতস্থানে বারবার হাত দেয়া উচিত নয়। এতে ইনফেকশনের সম্ভাবনা বাড়ে। বাসায় ফেরার সাথে সাথে গৃহস্থালির কাজ কর্ম শুরু করার প্রয়োজন নেই। এসব কাজে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নিন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা যতটা সম্ভব কম করা উচিত। এছাড়াও ভারী জিনিস ওঠানো বা বহন করা আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।

সিজারের পর কিছুদিন পর্যন্ত নিজের বাচ্চাকে কোলে নেয়াটাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সেটা খুব বেশি করার প্রয়োজন নেই। আপনি চেয়ারে বসে অন্য কারো সাহায্য নিতে পারেন। এসময় খুব বেশি  জোরে হাঁসা বা কাশি দেয়া উচিত নয়। এতে ক্ষতস্থানের ওপর চাপ পড়তে পারে। 

মানসিক যত্ন

বাচ্চা প্রসবের পর মায়ের ৪-৫ দিনের দিন ইমোশনাল ব্রেকডাউন হয়। একটুতেই খারাপ লাগে, কান্না পায়, দুর্বল লাগে এবং ঠিকমতো চিন্তা করার ক্ষমতা থাকেনা। অনেক মা-ই নরমাল ডেলিভারি হয়নি বলে অনেক মন খারাপ করে থাকেন বা নিজেকে অযোগ্য বলে ভাবতে থাকেন। এসব অনুভূতি নিয়ন্ত্রন করা অনেক সময় মায়েদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই মাকে পরিবারের অন্যদের এবং একজন ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বাবা ও পরিবারের অন্যদের সহযোগীতা বিশেষভাবে কাম্য এই সময়টিতে।

এসময় উচিত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মা-কে সবসময় মোটিবেশনে রাখা, তার বিভিন্ন কাজের প্রশংসা করা, এমনকি তার অন্যান্য কোনো ব্যাবহারের সমালোচনা না করে ঠাণ্ডা মাথায় তাকে শান্ত করা এবং যথাসম্ভব তাকে সঙ্গ দেয়া। একা মায়েদের ক্ষেত্রে পরিবারে বিষয়টি অনেকখানি কঠিন হয়, যার কারণে গর্ভাবস্থায় এ বিষয়ের প্রয়োজনীয় প্ল্যান করে রাখা দরকার।

সিজারের পর নিচের লক্ষনগুলো দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে:

  • ১০০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি জ্বর আসলে
  • পেটে হঠাৎ ব্যাথা হলে, পেট নমনীয় হতে উঠলে বা জ্বলুনি হলে।
  • কাঁটা স্থানে হঠাৎ ব্যাথা হলে বা পুঁজ দেখা গেলে।
  • যোনিপথে নির্গত তরলে দুর্গন্ধ হলে
  • পায়ের কোনো স্থান ফুলে গেলে, লাল হয়ে গেলে বা ব্যাথা হলে
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালা পোড়া হলে বা প্রস্রাবের সাথে রক্ত গেলে
  • স্তনে বা বুকে ব্যাথা বা শ্বাসকষ্ট হলে।
  • সবশেষে মনে রাখতে হবে প্রসব পরবর্তী ৬-৭ সপ্তাহ পর মাকে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
  • সম্পূর্ণ চেক-আপের জন্য আমাদের দেশে মায়েদের এই সেবা গ্রহণের হার খুবই কম। এ সময় চিকিৎসক মাকে সম্পূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন চিকিৎসা ও উপদেশ দিয়ে থাকেন।

এই চেকআপের সুবিধাসমূহ হচ্ছে- গর্ভধারণের সময় মায়ের শরীরে যে পরিবর্তন হয়েছিল তা পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে কিনা চিকিৎসক তা নির্ণয় করে থাকেন।

Link copied!