• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

গরমে সুস্থ রাখুন শিশুকে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩, ০১:৪৫ পিএম
গরমে সুস্থ রাখুন শিশুকে

গ্রীষ্মের দাবদাহ যেন থামতেই চাইছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোদ, বাড়তে থাকে তাপমাত্রা, বাড়তে থাকে অস্বস্তি। এই প্রচণ্ড গরমে আমাদের সবার মত শিশুদেরও নাজেহাল অবস্থা । শিশুরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে এই গরমে তাদের দরকার কিছু অতিরিক্ত যত্ন,দরকার কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা। চলুন জেনে নিই এই গরমে আপনার শিশুর অসুস্থতা ঠেকাতে ও সুস্থ রাখতে কী কী করতে পারেন।

কী ধরনের সমস্যা হতে পারে

  • গরমে শিশুরা অনবরত ঘামে। এই অতিরিক্ত ঘাম থেকে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা লাগার সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে লবণ পানি বেরিয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা হতে পারে। পাশাপাশি ইলেকট্রলাইট বা সোডিয়াম, পটাশিয়াম এর ঘাটতি হতে পারে।
  • চামড়ায় র‍্যাশ বা ঘামাচি হতে পারে। বারবার চুলকানোর ফলে তা থেকে ত্বকে অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। অনেকক্ষণ ডায়াপার পরা থাকলেও এ ধরনের র‍্যাশ হতে পারে।
  • গরমে হজম শক্তি ব্যাহত হয়ে বাচ্চার পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে।
  • মাথা ঘেমে গিয়ে চুলে খুশকি হতে পারে।


এ ধরনের সমস্যা যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে গরমকালে শিশুর ব্যাপারে কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা পালন করা উচিত। যেমন—

বেশি বেশি পানি পান 
শিশুর পানিশূন্যতা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর শিশুকে পানি অথবা ফলের রস খাওয়ান। এছাড়া শিশুর পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন মৌসুমী ফলও খাওয়াতে পারেন। চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ মত স্যালাইন কিংবা গ্লুকোজ খাওয়াতে পারেন।

যেসব শিশুদের বয়স ৬ মাসের কম, তাদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাদ্য। সেক্ষেত্রে বার বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চা খেতে না চাইলে বারে বারে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে।

সহজপাচ্য নরম খাবার দিন
ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুকে পরিপূরক খাবার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো যায়।

পরিধানের জন্য সুতি কাপড়
কাঠফাটা গরমে যেকোনো ফ্যাশনেবল পোশাকের চেয়ে সুতি ঢিলাঢালা আরামদায়ক জামা শিশুর জন্য উপযুক্ত। কোনোভাবেই সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার করা যাবে না। সুতি কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। তাই গরমে বাচ্চাকে সুতির জামা পরিয়ে দিন। জামা ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জামা খুলে শরীরের ঘাম মুছে দিন। হালকা করে পাউডার দিতে পারেন। ঘাম শুকিয়ে এলে অন্য জামা পরিয়ে দিতে হবে। গায়ের ঘাম যেন গায়েই না শুকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘরেই খেলার ব্যবস্থা করে দিন
খেলাধুলা শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে যেহেতু প্রচণ্ড গরম, এই গরমে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করলে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই ঘরেই ফ্যানের নিচে শিশুর খেলার ব্যবস্থা করুন।

বাচ্চাদের নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ 
শিশুদের শরীর বড়দের চেয়ে বেশি নাজুক হয়, তাই গরমে বাচ্চাকে নিয়ে দূর পাল্লার ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে গাড়ি কিংবা বাসে ভ্রমণ করা একেবারেই উচিত না। সম্ভব হলে নদীপথে লঞ্চ জার্নি করা যেতে পারে। নিতান্তই প্রয়োজন হলে, সব ধরনের সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে তবেই ভ্রমণ করুন।

নিয়মিত গোসল করান
অনেকেই বাচ্চাকে নিয়মিত গোসল করাতে চান না ঠান্ডা লাগার ভয়ে। এই প্রচন্ড গরমে শিশুকে অবশ্যই রোজ ভালোভাবে গোসল করাতে হবে। গোসলের পর শিশুর মাথা ভালো ভাবে মুছিয়ে দিন। ভিজা চুল থেকে ঠান্ডা লেগে শিশুর জ্বর, সর্দি কাশি হতে পারে।

চুল কেটে ছোট করে রাখুন
বাচ্চাদের অনেক সময় সারাক্ষণ মাথা চুলকাতে দেখা যায়। শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে সাথে বাচ্চার মাথার ত্বকও গরমে ঘেমে যায়। চুলের গোড়ায় ঘাম জমে তা থেকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। এর থেকে পরবর্তীতে ক্রনিক খুশকির সমস্যা হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব চুল কেটে ছোট করে দিন।

ঘরের ভেতর আলো-বাতাস
ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দরজা জানালা যতটা সম্ভব খোলা রাখতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে বারান্দায় বসিয়ে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এসি বা ফ্যানের বাতাস আরামদায়ক ঠিকই, কিন্তু তা প্রাকৃতিক আলো বাতাসের বিকল্প নয়।

ডাক্তারের শরণাপন্ন 
এত সতর্কতা সত্ত্বেও আপনার শিশু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তবে উপরোক্ত সতর্কতা অবলম্বন করলে সেই সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন—

  • যদি শিশুর চেহারা দেখে অসুস্থ বলে মনে হয় 
  • হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যায়
  • অতিরিক্ত পানি পিপাসা
  • বার বার বমি কিংবা পাতলা পায়খানা
  • একেবারেই খেতে না চাওয়া
  • প্রস্রাবের পরিমাণ যদি কমে যায় 
  • চোখ বসে যায় অথবা জিহ্বা শুকনো হয়ে যায়
  • শিশুর মধ্যে যদি নিস্তেজ ভাব দেখা যায় অথবা কোনো কারণ ছাড়াই খেলাধুলা না করলে

এ সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ অথবা নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।

Link copied!