• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গর্ভবতীর জন্য করোনা টিকা কতটা নিরাপদ?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম
গর্ভবতীর জন্য করোনা টিকা কতটা নিরাপদ?

দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এই সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না শিশুসহ সব বয়সের নারী-পুরুষেরা। বিশ্বে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই গর্ভবতী নারীদের সুরক্ষা নিয়ে বিশেষ যত্নের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। শুরুতে গর্ভবতী ও নবজাতকদের সুরক্ষায় করোনা টিকার কার্যকারিতার প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের তালিকার বাইরে রাখা হয়। কিন্তু বিশ্বজুড়ে গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে গর্ভবতীদের করোনা টিকার আওতায় নিয়েও এসেছে।

গর্ভবতী নারীদের করোনা টিকা দেওয়া ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারও। গর্ভবতীর স্বাস্থ্যসুরক্ষায় দ্রুত টিকার আওতায় আনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ প্রকাশ-এর বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ডাক্তার আছেন’- এর ‘করোনা টিকা সমাচার ও গর্ভবতী মা’ বিষয়ক আলোচনায় উপস্থিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি। গর্ভবতীর করোনা টিকা নেওয়া প্রয়োজন কি না কিংবা এই টিকা কতটুকু কার্যকর এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সঞ্চালনায় ছিলেন সানজিদা শম্পা।

করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের কী কী ঝুঁকি রয়েছে, এ বিষয়ে ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি বলেন, “প্রাপ্ত গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত গর্ভবতীর সিভিয়ার ডিজিজ ডেপেলপ করে। অধিকাংশ মাকেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে। অক্সিজেন দ্রুত কমে যাচ্ছে। এমনকি তাদের আইসিইউতে ভর্তির হার অন্যদের চেয়ে অনেক বেশিও থাকছে। করোনায় আক্রান্ত হলে অকালপক্ব শিশু জন্ম নিতে পারে। শিশুটিরও আইসিইউ প্রয়োজন হচ্ছে। নবজাতক মৃত্যুর হার বেড়ে যায়।”

“ডেলিভারি ছাড়াও আরও যে সমস্যাগুলো দেখা যাচ্ছে, প্রসবের সময় করোনা আক্রান্ত হলে তার প্রিয়েক্লামসিয়া হতে পারে। মানে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা হতে পারে। যেখান থেকে মায়ের এক্লামসিয়া, মানে মায়ের খিঁচুনির মতো একটি ভয়াবহ রোগের শিকার হতে হয়।”

এছাড়া গর্ভকালীন বিভিন্ন সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থুলতা থাকলে সেগুলোও করোনা আক্রান্তের পর মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি মাতৃ মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।”

গর্ভবতী মায়েদের টিকা নিলে বেশি ঝুঁকি, নাকি না নিলে বেশি ঝুঁকি থাকছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. সুমি বলেন, “এই মুহূর্তে টিকা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। গর্ভবতী মায়ের টিকার আওতায় আসতেই হবে। রয়্যাল কলেজ অ্যান্ড অবস্টটিটিস অন গাইনোকোলোজি এবং জয়েন্ট কমিটি অব ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইউমিনাইজেশন (জেসিভিআই), এসএইচএস, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলসহ (সিডিসি) সব ব্রিটিশ ফোরাম ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো থেকে বলা হয়েছে যে, টিকা নেওয়া গর্ভবতী নারীর জন্য় অনেক বেশি নিরাপদ।”

“কারণ টিকা নেওয়া গর্ভবতী নারীরা করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃদু উপসর্গ নিয়েই থাকবে। তার শারীরিক সমস্যাগুলো সিভিয়ারিটির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাটা কম। অক্সিজেন ডিপেনডেন্সি লাগার সম্ভাবনাটা অনেক কম। ভেন্টিলেটর দেওয়ার সম্ভাবনাটাও কমে যায়। সেই সঙ্গে অকালপক্ব শিশু জন্ম নেওয়ার প্রবণতাও কমে যায়। কারণ, সিভিয়ারিটি না হলে সাধারণত অকালপক্ব শিশু জন্ম হয় না।”

“যারা সাধারণ গর্ভবতী নারী তাদের জন্য় এটা অনেক বেশি উপকার। কারণ, তার সিভিয়ারিটির সম্ভাবনার কমে যাচ্ছে বা অকালপক্ব শিশু জন্মের ভয়ও থাকে না।”

“টিকা না দিলে গর্ভবতী নারীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে, ভেন্টিলেশন সাপোর্ট লাগতে পারে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, গর্ভবতী নারীর ভ্যাকসিন নেওয়াটাই হচ্ছে অনেক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ। শুধু মায়ের জন্য়ই নয়, গর্ভস্থ শিশুর জন্যও এটি উপকারী ও কার্যকর।”

Link copied!