• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস: ঘরে আটকে থাকবে না একটি মেয়েও


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২২, ০১:২২ পিএম
বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য দিবস: ঘরে আটকে থাকবে না একটি মেয়েও

২৮ মে, শনিবার বিশ্ব মাসিক দিবস। ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব। এই সময় মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তন ও মাসিক সময়ের সুরক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেই দিবসটি পালিত হয়। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, “এমন একটি বিশ্ব তৈরি করা যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে কোনো নারী বা কন্যাশিশু ঋতুস্রাবের কারণে আটকে থাকবে না।”

পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাব প্রত্যেক নারীর স্বাভাবিক জীবনচক্রের অংশ। নারীর নিয়মিত ও সঠিকভাবে মাসিক হলেই তার স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। সেই নারী সন্তান ধারণে সক্ষম হয়ে ওঠে। এই সময় মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে বাড়তে পারে সংক্রমণ ও শারীরিক জটিলতা। এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেই দিবসটি পালিত হয়। 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশও। এই দেশে প্রায় ৭১ শতাংশ নারী এখনো পিরিয়ড চলাকালীন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতন নন। বিষয়টি এখনো অগোচরেই রয়ে গেছে, যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয় না। কিংবা প্রসঙ্গ উঠলেই স্বস্তিবোধ করেন না অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, মাসিকের সময় অপরিচ্ছন্ন থাকা কিংবা সঠিক নিয়ম মেনে না চললে গর্ভধারণে নারীরা জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তাই সচেতনতা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুব্যবস্থাও করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাইজেন সার্ভে-২০১৮-এর তথ্য অনুসারে, প্রায় ৫০ শতাংশ কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না এখনো। তারা অস্বাস্থ্যকর পুরোনো কাপড় ব্যবহার করেই থাকছে। বিশেষ করে বস্তিসহ নিম্ন আয়ের মেয়েদের মধ্যে এই অবস্থা বেশি দেখা যায়। 

তা ছাড়া কিশোরীরা এই ধরনের জটিলতায় বেশি পড়ছে। কারণ স্কুল বা কলেজে পড়ুয়া কিশোরীরা মাসিকের সময় উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। অধিকাংশ স্কুল বা কলেজে পরিবেশবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থাও রাখা হয় না। তাই অধিকাংশ মেয়ে এই সময় ঘরেই আটকে থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, শিক্ষার্থীদের মাসিকের সময় টানা ৭-৮ ঘণ্টা স্কুলে থাকতে হচ্ছে। স্কুলগুলোতে জরুরি স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা না থাকলে তারা মাসিকের সময় বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়ে। এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ থেকে সুব্যবস্থার নিশ্চিত প্রয়োজন। 

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, মেয়েদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। এর দাম রাখতে হবে নাগালের মধ্যেই। তবেই নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সরকার ও পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাসিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। ভুল ধারণা বা কুসংস্কার দূর করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বেসরকারি সংস্থা।

সাধারণত ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সেই মেয়েদের মাসিক শুরু হয়। গড়ে ২৮ দিন পরপর হয়। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে ২১ বা ৩৫ দিন পরপর হওয়াও স্বাভাবিক। সাধারণত নারীর বয়স ৫০ থেকে ৫২ বছর হলেই মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদিও নারীদের শারীরিক গঠন বা বৃদ্ধির ওপর এটি নির্ভর করে। 

মেয়েদের মাসিক সুরক্ষার বিষয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর ন্যাপকিন বদলে নিতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে এই অভ্যাস জরুরি। এছাড়া প্রতিদিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাও মাসিককালীন সুরক্ষা দেবে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে খাদ্যাভ্যাসেও। আয়রন ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। বিশেষ করে  কচুশাক, লাউশাক, পাটশাক, লালশাক, কলা, গুড়, ডিম, কলিজা, শুঁটকি মাছ, ডিম, দুধ, দই, ছোট মাছ ও মুরগির মাংস খেতে হবে।

Link copied!