ডাউন সিনড্রোম শিশুদের জন্মগত একটি সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা জানান, জন্মগতভাবে কারো মধ্যে ক্রোমোজোম বেশি থাকলে ডাউন সিনড্রোম হতে পারে। যা শিশুর বিকাশ,পড়াশোনা ও স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুর বাবা-মা হতাশ হয়ে যায়। শিশুর বিকাশকে কীভাবে সামলাবেন তা বুঝে উঠতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বিশেষজ্ঞরা জানান, ডাউন সিনড্রোম থাকলে ভেঙে না পড়ে তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সন্তানকে এই প্রতিবন্ধকতা জয় করতে সাহায্য করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসাও নিতে হবে।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের লালন-পালনে কোন কোন বিষয় সচেতন থাকতে হবে তা জানুন এই আয়োজনে_
শিশুর বিকাশ
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা অন্যদের তুলনায় কিছুটা ছোট আকারের হয়। তবে তাদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে। এতে শিশুর সমস্যা হতে পারে। শিশুর ওজন যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হয়। প্রয়োজনে বাচ্চাদের ব্যায়াম করাতে হবে এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শিশুর ২ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও বছরে অন্তত একবার ওজনের বিকাশে নজর দিতে হবে।
বুদ্ধির বিকাশ
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর বুদ্ধির বিকাশও কম হয়। যদিও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ভিন্ন রকম হতে পারে। ছোটবেলা থেকেই যা পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। শিশুর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলে এই সমস্য়া আগেই বোঝা যায়।
শিশুর হৃদযন্ত্র
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর প্রায় ৫০ শতাংশের হৃদযন্ত্রে সমস্যা থাকে। শিশুর হার্ট বিট বেশি থাকে। এক্ষেত্রে কিছু কিছু হৃদরোগ চিকিত্সায় ভালো হয়ে যেতে পারে।
শিশুর হরমোন
এই শিশদের মধ্যে থায়রয়েড হরমোনের অভাব দেখা যায়। জন্মের পর ৬ ও ১২ মাস এবং তার পর প্রতি বছর টিএসএইচ পরীক্ষা করাতে হবে। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে। আবার কিছু বাচ্চার টাইপ ১ ডায়াবেটিজ হতে পারে। ইনসুলিনের মাধ্যমে এই জটিলতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
ঘুমে সমস্যা
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা রাতে ঠিক করে ঘুমাতে পারে না। যে শিশুর শরীরে মাংসপেশী কম থাকে তারা এই সমস্যায় বেশি ভোগে। সন্তানের ৪ বছর হলে স্লিপ স্টাডি করাতে পারেন।
শ্রবণশক্তি কম থাকে
এই সিনড্রোমে বাচ্চাদের শ্রবণ ক্ষমতা কম থাকায় প্রথম ৬ মাস ও তারপর প্রতি বছরে কানের পরীক্ষা করান। প্রায় ৮০ শতাংশ বাচ্চাদেরই এই সমস্যা হয়। হিয়ারিং এডের সাহায্য নিতে পারেন।
দৃষ্টি শক্তির সমস্যা
অধিকাংশ বাচ্চাই দৃষ্টি সংক্রান্ত বিকারে ভোগে। কাছের বা দূরের কোনও কিছু দেখতে সমস্যা বা এস্টিগমেটিসম হতে পারে। নিয়মিত শিশুর চোখ পরীক্ষা করান। শিশুকে কোনো সমস্যা হলেই জানাতে বলুন।
ঘাড়ের সমস্যা
এই সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, চলাফেরায় পরিবর্তন, হাত ও পায়ের ব্যবহারে পরিবর্তন, মাথা নিচু হয়ে যাওয়া, বাহু বা পা অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শিশুর ভ্যাকসিন
এসব বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব ব্যবস্থা রাখতে হবে। সব রোগের প্রতিষেধক দিতে হবে। প্রতি বছরের ফ্লু ভ্যাকসিনও দেওয়া উচিত।
মেয়েদের যৌন শিক্ষা
এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মেয়েদের যৌন শিক্ষা দিন। তারাও গর্ভবতী হতে পারে। নিয়মিত মাসিক চক্রসহ অন্যান্য় গাইনি বিষয়ে শিক্ষা দিন।
শিশুর খাদ্যাভ্যাস
এসব বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ মাস বয়সী শিশুদের খাওয়া-দাওয়া, শারীরিক গতিবিধি, ক্যালোরি, ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন গ্রহণের বিষয়ে বিশেষ নজর দিন।
কাউন্সিলিং
এই বিষয়ে বাবা-মাকে কাউন্সিলিংয়ের আওতায় আসতে হবে। কীভাবে এসব শিশুকে সুন্দরভাবে বড় করা যায় তা জানতে হবে। এছাড়াও পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে ডাউন সিনড্রোমের সম্ভাবনা কম থাকে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :