• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঈদে লাল মাংস খান পরিমিত পরিমাণে


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
ঈদে লাল মাংস খান পরিমিত পরিমাণে

কোরবানি ঈদ মানে মাংস খাওয়ার ধুম। পশু কোরবানির আনন্দ, সেই সঙ্গে থাকে মাংসের বিভিন্ন পদ রান্না। মাংসের বিভিন্ন পদ খেতে খেতে অনেকেই স্বাস্থ্যের বিষয়টি ভুলে যান। যা মোটেও ঠিক নয় বলে সর্তক করেছেন জাতীয় পুষ্টিসেবার পুষ্টিবিদ ও লাইন ডিরেক্টর ড: এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।

সংবাদ প্রকাশ-এর বিশেষ আয়োজন 'ডাক্তার আছেন' অনুষ্ঠানে ‘রেডমিটের পুষ্টিকথা’ বিষয়ক আয়োজনে যুক্ত হয়েছিলেন জাতীয় পুষ্টিসেবার পুষ্টিবিদ ও লাইন ডিরেক্টর ডা: এস এম মোস্তাফিজুর রহমান। ঈদের খাওয়া-দাওয়া ও রেডমিটের বিষয় নিয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সানজিদা শম্পা।

ঈদে নানা খাবারের আয়োজন থাকে, এই সময় কোন ধরনের খাবার  খাওয়া উচিত, এই প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঈদ বা অন্য যেকোনও সময়ই হোক না কেন সবাইকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খেতে হবে। সুস্থ মানুষের সুষম খাবার খেতে হবে। পরিমিত খাবার খেতে হবে। যারা পরিশ্রম কম করেন তারা সাধারণত ৬০ ভাগের কাছাকাছি খাবার গ্রহণ করবেন। এরমধ্যে শর্করা ও প্রোটিনের সমন্বয় করতে হবে। ১৫ থেকে ২০ ভাগ প্রোটিন খাওয়া যেতে পারে। শর্করা পাওয়া যাবে ভাত ও রুটি থেকে এবং রেডমিট থেকে পাওয়া যাবে প্রোটিন। কোরবানির সময় টানা এক সপ্তাহ রেডমিট খাওয়া হয়। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খাবেন।"

“মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবমিলে প্রোটিন জাতীয় খাবার মূল খাবারের ২০ ভাগের বেশি হওয়ার দরকার নেই। চর্বি জাতীয় খাবার ১৫ থেকে ২০ ভাগ এবং বাকিটা খাবেন ভিটামিন ও মিনারেলস। এরজন্য় শাকসবজি ফলমূল খাওয়া যেতে পারে।"

“কোবরানির ঈদে মাংস খাওয়া বেশি হলে যারা সুস্থ আছেন তারা তা পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করে সামঞ্জস্য করে নিতে পারেন। কিন্তু যাদের বাতের ব্যথা আছে, কোলেস্টরেল বা অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদী কোনও শারীরিক সমস্যা আছে তারা রেডমিট খাওয়ায় সর্তক থাকবেন। তাদের ভুলে গেলে চলবে না তাদের রোগ আছে।"

রেডমিট খাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে তিনি বলেন, “রেড মিট দীর্ঘদিন খাওয়া এমনিতেই ভালো নয়। রেডমিট খাওয়ার পরামর্শ কখনোই দেওয়া হয় না। তবে যেহেতু ঈদের মধ্যে খেতেই হচ্ছে তাই শাক সবজি অন্য খাবারগুলোও পরিমিত হারে খেতে হবে। অন্য়থায় দীর্ঘমেয়াদী রোগ হতে পারে।”

তরুণ প্রজন্মের জন্য রেডমিট খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকর এই বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “তরুণ প্রজন্মরা পরিশ্রম করছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী তেমন কোনও রোগও থাকে না। তাই তরুণ প্রজন্ম রেডমিট খেতে পারে। তারা শরীরচর্চা বা চলাফেরার মধ্যেই এগুলো বার্ণ করে ফেলতে পারে। তবে রেডমিট বেশি খাওয়া হবে ঈদের সময়। তাই এই সময়টাতে শরীরচর্চাও একটু বেশি সময় ধরে করা ভালো।”

অ্যাসোসিয়েশন অফ রেড অফ প্রসেসড মিট-এর গবেষণায় উঠে এসেছে, রেডমিট খেলে কোলোরেক্টল  ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এই বিষয়ে কতটুকু সতর্কতা প্রয়োজন? এই প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ইউরোপ, আমেরিকার মানুষ রিফাইন ফুড বেশি খায়। তাই তাদের খাবারে আঁশযুক্ত খাবার কম থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষ আঁশযুক্ত খাবার খায়। তাই তাদের হজমশক্তি তুলনামূলক ভালো। এতে কোলোরেক্টল ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে না। এছাড়াও বিদেশিরা লেটুস পাতা ছাড়া খুব বেশি শাক-সবজি খায় না। আমরা শাক সবজি বেশি খাই। এক দুই দিন মাংস খেলে ক্যান্সার হবে এটা যুক্তি নেই। এশিয়ার মধ্যে কোলোরেক্টল ক্যান্সারের সংখ্যা কম। কারণ তারা আঁশযুক্ত টাটকা খাবার খায়।“

“এছাড়া কিছু পরিবার ছাড়া, গরুর মাংস দেশের অধিকাংশ পরিবারের কাছেই দামী একটি খাবার। তাই অধিকাংশ পরিবার ঈদের সময়টাতেই শুধু রেডমিট খাচ্ছে। সারাবছর খুব একটা খায় না।“

গরুর মাংসের অনেক ধরনের প্রসেসড ফুড পাওয়া যায়, ফাস্টফুডে রেড মিট ব্যবহার হচ্ছে। এতে অল্প বয়সেই তরুণ-তরুণীরা মুটিয়ে যাচ্ছে, এক্ষেত্রে তাদের কোনও সতর্কতা থাকতে হবে কিনা? জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অবশ্যই। এক্ষেত্রে পরিবারের বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। বাচ্চাদের প্রসেসড খাবার দেওয়া যাবে না। বাচ্চারা মর্জি করে পিজা, বার্গারের জন্য়। তাদের টিফিনে দিয়ে দিচ্ছে। এটা ঠিক না। বরং বাচ্চাদের দেশি খাবারে অভ্যস্ত করাতে হবে। টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রেখেও খাবার খাওয়া ঠিক নয়। যখন খাবার খাবে প্রয়োজনে তখনই রান্না করে খেতে হবে।“

কোন বয়সের কত পরিমাণ রেডমিট খাবেন এই বিষয়ে তিনি বলেন, “মাঝ বয়স থেকে বেশি বয়সীদের সর্তক বেশি থাকতে হবে। বয়স্করা তো সচেতন থাকবেনই। তাই যতটা সম্ভব কম খাওয়াই ভালো। খাবারের কথা ভাবুন, সেই সঙ্গে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের কথা ভুলে গেলে চলবে না।"

Link copied!