জীবিত অবস্থায় এফডিসির হারানো সদস্য পদের জন্য আন্দোলন করেছিলেন অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। ২০১৭ সালে সদস্যপদ বাতিল করে দিয়ে তাকে সহযোগী সদস্য করা হয়। সদস্য হিসেবে সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত ছিলেন তিনি। তবে তার এই প্রাপ্তি হলো মৃত্যুর পর! মরে যাওয়ার একদিন পরেই এই অভিনেত্রীকে সদস্য হিসেবে স্বীকার করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
২০১৭ সালে মিশা-জায়েদ প্যানেল কমিটি ক্ষমতায় আসার পর শিমুসহ ১৮৪ শিল্পীর ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। এরপর থেকেই নিজের সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার জন্য় দাবি জানিয়ে আসছিলেন এই অভিনেত্রী। নানা সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে সরব ছিলেন তিনি। এর ফলে সমিতি থেকে ভোটাধিকার হারানো আলোচিত ১৮৪ জন শিল্পীর একজন হিসেবেই তাকে চেনে সবাই।
গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে অভিনেত্রী শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে জানা যায়, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তিনি। তার করুণ মৃত্যুতে চলচ্চিত্রপাড়ায় শোক নেমে আসে। সেই সঙ্গে তার মৃত্যু চলচ্চিত্রপাড়ায় চাঞ্চল্যও তৈরি করে।
এদিকে শিমুর মৃত্যুর ঘটনাটি বেশ মোটাদাগে প্রভাবিত করেছে চলমান শিল্পী সমিতির নির্বাচনকেও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিমু গত ৪ বছর ধরে সহযোগী সদস্য থেকে নিজের সদস্যপদ ফিরে পেতে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। সেই শিমু মৃত্যুর পরের দিনই সমিতির সদস্য হয়ে গেলেন অনায়াসে!
১৯ জানুয়ারি এফডিসিতে দেখা গেল শিমুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ব্যানার তৈরি করেছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। যার একটি দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নামে, অন্য একটি আছে মিশা-জায়েদ প্যানেলের নামে। ব্যানারগুলোতে শিমুর পরিচয় দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির সদস্য চিত্রনায়িকা শিমু’। এই পরিচয় দৃষ্টি কেড়েছে সবার। জন্ম দিয়েছে আলোচনারও।
অনেকে বিষয়টি মৃত শিমুর সঙ্গে উপহাস হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, যে শিমুকে মিশা-জায়েদ নেতৃত্ব সদস্য থেকে সহযোগী সদস্য বানিয়ে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তারাই মৃত্যুর পর তাকে সদস্য বানিয়ে দিল।
অনেকের ধারণা, শিমুর মৃত্যুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে শিল্পীদের সমর্থন নিজেদের দিকে টানতেই এই কৌশল অবলম্বন করছে তারা।
ভোটের রাজনীতি গত চার বছর ধরে শিল্পী সমিতিতে অবহেলিত শিমুকে যেন গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। তাকে নিয়ে কথা বলে আবেগ ছড়াতে পারলেই যেন লাভ। আর সেই লাভই ঘরে তোলার চেষ্টা চলছে।
শিল্পীদের মধ্যে প্রচলিত আছে, ২০১৭ সালে মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিপক্ষে গিয়ে মৌসুমীর প্যানেলকে সমর্থন দেন শিমু। সেজন্যই মিশা-জায়েদ প্যানেল নির্বাচিত হয়ে সমিতির মসনদে বসে তার ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। সদস্য থেকে সরিয়ে সহযোগী সদস্য করে।
শিমুর ভোটাধিকার বাতিলের ব্যাপারে তৎকালীন সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, “শিল্পী-সমিতির সংবিধান অনুযায়ী টানা ২ বছর চলচ্চিত্রে কাজ না করায় শিমুর ভোটাধিকার বাতিল করা হয়। তার সদস্যপদ বাতিল করে সহযোগী সদস্য করা হয়।”
অথচ বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সমিতিতে অনেক সদস্য রয়েছেন যারা টানা ২ বছরের অধিক সময় ধরে কোনো সিনেমায় কাজ করেননি। এমন অনেক সদস্য নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু। ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। একে একে অভিনয় করেছেন ৫০টিরও বেশি সিনেমায়। কাজ করেছেন বহু নাটক। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের অনেক গুণী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন শিমু। সেই তালিকায় রয়েছেন মরহুম চাষী নজরুল ইসলাম, পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, এ জে রানা, শরিফুদ্দিন খান দীপু, এনায়েত করিম, শবনম পারভীন।
শিমু অভিনয় করেছেন রিয়াজ, অমিত হাসান, বাপ্পারাজ, জাহিদ হাসান, মোশারফ করিম, শাকিব খানসহ অনেক গুণী ও জনপ্রিয় অভিনেতাদের বিপরীতে।