প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ও অভিনেত্রী শাঁওলি মিত্র আর নেই। পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানান, রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বেহালার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরে কলকাতার সিরিটি শ্মশানে অনাড়ম্বরভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
নাট্যকিংবদন্তি শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের মেয়ে শাঁওলি মিত্র দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন।
পরিবারের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, হাসপাতালের যাওয়া বা চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার বিষয়ে শাঁওলি মিত্রের তীব্র অনিহা ছিল। অসুস্থতা সত্ত্বেও হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি তিনি। এমনকি মৃত্যুর পর, তাঁর মরদেহ যাতে প্রকাশ্যে না আনা হয়, সেই বিষয়েও একটি ইচ্ছাপত্র লিখে গিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “শাঁওলি মিত্র'র মৃত্যুসংবাদ আমাকে বড় হতবাক করলো। চেনা মানুষগুলো, যাঁদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, তাঁদের যেন হইরই করে চিরকাল বেঁচে থাকার কথা। কার যে গোপনে বয়স বাড়ে, কার যে অসুখ করে, জানা হয় না। ২০০৭ সালে আমাকে যখন কলকাতা থেকে বের করে দিয়ে দিল্লিতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল, ক'জন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন, শাঁওলি মিত্র ছিলেন তাঁদের একজন। তিনি আমাকে ফোন করতেন, মনে সাহস দিতেন। আমি চিরকালই তাঁর গুণমুগ্ধ।”
দেশের নাট্যাভিনেত্রী শিমুল ইউসুফ লিখেছেন, “নাথবতী অনাথবত-১৯৮৫ রবীন্দ্র সদন মঞ্চ। সেই মুগ্ধতা এখনও কাটেনি শাঁওলি দি। তুমি আমাদের অনাথ করে মা তৃপ্তি মিত্র, বাবা শম্ভু মিত্রের কাছে চলে গেলে।”
প্রয়াত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ ছবিতে ‘বঙ্গবালা’র চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয়তা পান শাঁওলি মিত্র। এ ছাড়া অভিনয় করেছেন ‘বিতত বিতংস’, ‘ডাকঘর’, ‘নাথবতী অনাথবত’, ‘পুতুল খেলা’, ‘একটি রাজনৈতিক হত্যা’, ‘হযবরল’, ‘চণ্ডালী’, ‘পাগলা ঘোড়া’, ‘পাখি’, ‘গ্যালিলিওর জীবন’-এর মতো একাধিক সাড়া ফেলা নাটকে।
২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান শাঁওলি মিত্র। এ ছাড়া ২০০৩ সালে সংগীত-নাটক একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার পান তিনি।
শাঁওলি মিত্রের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।