বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রাণপুরুষ, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ-এর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে তার প্রিয় স্থানে— গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে। শনিবার (১৯ জুলাই) দিনব্যাপী আয়োজনে অংশ নেন তার পরিবারের সদস্য, ভক্ত এবং নুহাশ পল্লীর কর্মীরা।
সকালে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে সঙ্গে নিয়ে কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঘনিষ্ঠ কিছু স্বজন ও নুহাশ পল্লীর কর্মীরা। কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
নুহাশ পল্লীর কর্মচারীরাও এই দিনে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন ‘স্যার’কে। দীর্ঘদিন হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন অনেকেই জানান, “নুহাশ পল্লী শুধু একটি জায়গা নয়, এটি তার সৃষ্টিকর্ম, ভালোবাসা ও জীবনদর্শনের প্রতিফলন।”
কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন শাওন। এসময় হুমায়ূন আহমেদ স্মৃতি জাদুঘর নিয়েও কথা বলেন। স্মৃতি জাদুঘরের কাঠামো হয়নি, তবে হুমায়ূনের স্মৃতিবিজড়িত যে জিনিস আছে সেগুলো সংরক্ষিত আছে বলেও এসময় জানান শাওন।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয় প্রিয় নুহাশ পল্লীর লিচু বাগানে। তার সমাধিস্থল এখন কেবল একটি কবর নয়, হয়ে উঠেছে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের জন্য এক স্মৃতির কেন্দ্রস্থল।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে আধুনিক কথাসাহিত্যকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন। ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে যাত্রা শুরু করে তিনি লিখেছেন শতাধিক উপন্যাস, অসংখ্য ছোটগল্প, নাটক, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও আত্মজৈবনিক রচনা। তার সৃষ্টি হিমু, মিসির আলি, ও শুভ্র—বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
টেলিভিশন নাটকে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’ এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক দিয়ে তিনি দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল ও সমালোচকদের প্রশংসিত। আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, ঘেটুপুত্র কমলা— প্রতিটি ছবিই হয়েছে আলোচিত ও দর্শকপ্রিয়। তার অনেক চলচ্চিত্রই পেয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।