• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২,

২০২৫ সালের সেরা ১০ চলচ্চিত্র, আপনি কোনটি দেখেছেন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
২০২৫ সালের সেরা ১০ চলচ্চিত্র, আপনি কোনটি দেখেছেন

বছরের শেষে এসে বিবিসি’র দুই চলচ্চিত্র সমালোচক ক্যারিন জেমস ও নিকোলাস বার্বার বেছে নিয়েছেন ২০২৫ সালের সেরা সিনেমাগুলো। অ্যাকশন থ্রিলার থেকে উষ্ণ পারিবারিক ড্রামা, ব্যঙ্গাত্মক কমেডি থেকে রাজনৈতিক থ্রিলার—বৈচিত্র্যে ভরপুর এই তালিকা বলছে, সিনেমার জগতে ২০২৫ ছিল সত্যিই ব্যতিক্রমী একটি বছর।

১. হ্যামনেট

চলতি বছরের সবচেয়ে আবেগঘন সিনেমা এটি। ম্যাগি ও’ফ্যারেলের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাতা ক্লোয়ে ঝাও ১৬শ শতকের শোক, ভালোবাসা ও শিল্পকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এতে, গল্পটি এক মুহূর্তেও মেলোড্রামায় ভেসে যায় না। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ১১ বছর বয়সী ছেলে হ্যামনেটের মৃত্যু, তার মা অ্যাগনেসের যন্ত্রণা—জেসি বাকলির অভিনয় ছবিটিকে দিয়েছে গভীরতা। পল মেসকাল চরিত্রটিতে এনেছেন জীবন্ত মানবিকতা। ভিজ্যুয়াল সৌন্দর্য, আবেগ, শোক; সব মিলিয়ে ‘হ্যামনেট’ বছরের সবচেয়ে মর্মস্পর্শী ও শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র।

২. সরি, বেবি

ইভা ভিক্টরের লেখা, পরিচালিত ও অভিনীত—এক দুর্দান্ত ব্যতিক্রমী ইন্ডি কমেডি ড্রামা। যৌন নিপীড়নের পর এক তরুণীর মানসিক পুনর্গঠন, বন্ধুত্ব, ব্যথা ও সহনশীলতার গল্প এমনভাবে বলা হয়েছে যে ভারী বিষয়টিও হয়ে উঠেছে বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ ও জীবন্ত। ভিক্টরের প্রথম সিনেমা হয়েও এর নিজস্ব ভাষা ও স্টাইল স্পষ্ট।

৩. ইজ দিস থিং অন?

ব্র্যাডলি কুপারের ‘পারফর্মিং আর্টস ট্রিলজি’র তৃতীয় ছবি এটি। এবার তিনি ঢুকেছেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডির জগতে। উইল আর্নেট অভিনয় করেছেন এক অবসাদগ্রস্ত মধ্যবয়সী মানুষকে, যে হঠাৎ মঞ্চে উঠে আবিষ্কার করে—হাসির মধ্যেও লুকিয়ে থাকে তার ভাঙা জীবনের সত্য। মধুর, উষ্ণ ও বাস্তবধর্মী এই সিনেমা বিবাহ, মধ্যবয়স ও জীবনের মানে নিয়ে এক স্নিগ্ধ অনুসন্ধান।

৪. ওয়ান ব্যাটেল আফটার অ্যানাদার

পল থমাস অ্যান্ডারসনের ভয়হীন, উচ্চাভিলাষী কাজ—যেখানে অ্যাকশন, পারিবারিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র সব কিছুই মিশেছে ভীষণ সাবলীলভাবে। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে দেখা যায় তার সেরা কমিক ফর্মে। বুদ্ধিবৃত্তিক গভীরতা, তীব্র গতিময়তা, চমকপ্রদ অ্যাকশন—সব মিলিয়ে সিনেমাটি এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ব্যাপক প্রশংসিত কাজগুলোর একটি।

৫. নো আদার চয়েস

‘ওল্ডবয়’-খ্যাত পার্ক চ্যান-উকের ব্যঙ্গাত্মক, রক্তাক্ত কমেডি এটি। যা এক সাধারণ কোরিয়ান কর্মজীবীর চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে ওঠা থেকে শুরু। কাহিনি দ্রুতই বাঁক নেয় যখন তিনি চাকরির প্রতিযোগীদের একে একে হত্যা করতে শুরু করেন। ব্যঙ্গ, সামাজিক সমালোচনা, প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব—সব মিলিয়ে সিনেমাটি একইভাবে ভয়ংকর ও হাস্যরসাত্মক।

৬. দ্য সিক্রেট অ্যাজেন্ট

ব্রাজিলের ১৯৭৭ সালের এক স্বৈরশাসিত সময়কে ধরেছে ক্লেবার মেনডোঁসা ফিলহোর এই রাজনৈতিক থ্রিলার। অসামান্য টেনশন, অ্যাকশন, পারিবারিক সম্পর্কের কোমলতা, এমনকি কিছুটা মেটা-হরর; সব মিলিয়ে ‘দ্য সিক্রেট অ্যাজেন্ট’ একটি বহুস্তরীয়, গভীর এবং অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ছবি।

৭. দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব

২০২৫ সালের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক চলচ্চিত্র এটি। পাঁচ বছরের এক ফিলিস্তিনি শিশুর বাস্তব মৃত্যুর মুহূর্ত ও তার ফোনে শেষ কথোপকথন নিয়ে তৈরি এই সিনেমা। অভিনেতারা অভিনয় করেছেন সহায়তাকারীদের, কিন্তু টেলিফোনের অপর প্রান্তে শোনা যায় সত্যিকারের হিন্দ রজবের কণ্ঠ। ডকুমেন্টারি ও নাটকীয়তার অসাধারণ মিশেলে এটি পরিণত হয়েছে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার এক নির্মম আর অসহনীয় দলিলে।

৮. সেন্টিমেন্টাল ভেল্যু

এক বিখ্যাত পরিচালক বাবা ও তার দুই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের জটিল সম্পর্ক, নিষ্ঠুর সত্য, কোমল আবেগ ও বাস্তবতার মিশেলে গড়া এক অসাধারণ পারিবারিক নাটক। স্টেলান স্কারসগার্ড ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় দিয়েছেন। সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, শিল্প ও জীবনের দ্বন্দ্ব; সবকিছুই ছবিটিকে দিয়েছে কাব্যিক সমৃদ্ধি।

৯. ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট

ইরানি পরিচালক জাফর পানাহির নিষিদ্ধ অবস্থায় নির্মিত চলচ্চিত্র এটি। ব্যঙ্গ, প্রতিবাদ ও মানবিক হাস্যরসে ভরপুর। এক সাবেক রাজনৈতিক বন্দী হঠাৎ রাস্তা থেকে তার নির্যাতনকারীর কণ্ঠ চিনে ফেলে এবং তাকে অপহরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও সে নিশ্চিত নয় মানুষটি সত্যিই সেই ব্যক্তি কি না। তেহরান ঘুরে সে খুঁজতে থাকে সত্য। এর বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ কান উৎসবের পাম দ’রের যোগ্যই ছিল।

১০. মার্টি সুপ্রিম

নিউ ইয়র্কের ১৯৫০ দশকের প্রেক্ষাপটে একটি দুরন্ত, গতিশীল চরিত্রকেন্দ্রিক সিনেমা এটি। টিমোথি শালামে অভিনয় করেছেন এক দুষ্টু, স্বার্থপর, স্বপ্নবাজ তরুণের ভূমিকায়। যার লক্ষ্য পিং-পং চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অপরাধ, রোমান্স, ব্যঙ্গ, অ্যাডভেঞ্চার-সবকিছু ধরে ছবিটি এক অবিশ্বাস্য মজাদার যাত্রা, যেখানে ফ্লয়েড চরিত্রটিও শেষ পর্যন্ত আপন হয়।

২০২৫ সালের সিনেমাগুলো স্পষ্ট করে দিয়েছে বিশ্ব চলচ্চিত্র এখন আরও বৈচিত্র্যময়, আরও রাজনৈতিক, আরও মানবিক এবং আরও সাহসী। গল্প, শিল্প, রাজনীতি, হাসি, অশ্রু; সব মিলিয়ে এই বছরের সেরা ১০ ছবি সত্যিই প্রমাণ করেছে- সিনেমা আজও সময়, সমাজ ও মানবিকতার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।

Link copied!