‘দিন দ্য ডে’ নির্মাণে খরচ ৪ কোটি: চুক্তিপত্র ফাঁস


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২, ০৯:০৫ পিএম
‘দিন দ্য ডে’ নির্মাণে খরচ ৪ কোটি: চুক্তিপত্র ফাঁস

কোরবানির ঈদে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ-ইরানের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘দিন দ্য ডে’। এই সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা গেছে অনন্ত জলিল-বর্ষাকে। সিনেমাটি মুক্তির আগে থেকে ছিল আলোচনায়। মুক্তির পর সেই আলোচনা বেরে হয় দিগুন। তবে আলোচনার সঙ্গে যুক্ত হয় বিতর্ক।

অনন্ত-বর্ষার বেফাঁস মন্তব্য, অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্র কলাকুশলীদের দাওয়াত দেবার পরও সেই দাওয়াতে না আসা থেকে শুরু করে বিতর্ক সঙ্গী করে এগিয়ে গেছে সিনেমাটি। তবে এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে অনন্ত জলিল ও ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমার পরিচালক মোর্তজা অতাশজমজমের মধ্যকার তিক্ততাকে কেন্দ্র করে।

সম্প্রতি তিনি চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশের আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এবার তিনি নিজের ইন্সটাগ্রাম আইডিতে ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমায় তার সঙ্গে অনন্তের করা চুক্তিপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে সিনেমাটির বাজেট মাত্র ৫ লাখ ডলার।

নির্মাতা মোর্তজা অতাশজমজম জানিয়েছেন, ‘‘২০১৮ সালে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছিলো। সে সময়ে ডলারের মূল্যমান ছিল ৮২ টাকা। সে হিসেবে ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমার মূল বাজেট চার কোটি টাকার একটু বেশি। অবশ্য অনন্ত জলিল সকল প্রকার প্রচারণায় বলেছেন তার ছবির বাজেট ১২০ কোটি টাকা।’’

মোর্তজা বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিলো অনন্ত জলিল পুরো টাকাটাই বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগকারী হিসেবে তিনি 
সিনেমার লভ্যাংশের ৮৫ শতাংশ নিবেন এবং প্রযোজক হিসেবে তিনি ১৫ শতাংশ পাবেন। যেখানে অনন্ত আমাদের ইরানি টিমের পুরো পাঁচ লাখ ডলার পরিশোধ করেননি সেখানে ছবির বাজেট কীভাবে দশ মিলিয়ন ডলার বলেন? দুর্ভাগ্যবশত, শুটিং শুরুর দিনগুলোতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এটি আমার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু চুক্তির কারণে আমার ফিরে আসার কোনো পথ ছিলো না। আমি চাইনি আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়ে যাক।’’

পরিচালক আরও বলেন, ‘‘ক্রমাগত স্ক্রিপ্ট পরিবর্তন থেকে আমাদের মতপার্থক্যের শুরু হয়। গল্পে আইএস জঙ্গীবাদ ইস্যু থেকে মাদক ও মাফিয়া ইস্যুতে পরিবর্তন। শুটিংয়ের স্থান সিরিয়া ও লেবানন থেকে পরিবর্তন করে আফগানিস্তান ও তুরস্কে নিয়ে যাওয়ায় আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। যেহেতু চলচ্চিত্রটির ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশের এবং তিনি বলতেন বাংলাদেশের সিনেমা ও মানুষদের আমার চাইতে ভালো জানেন এই অজুহাতে প্রতিদিন সিনেমার স্ক্রিপ্ট ও অভিনয়ে হস্তক্ষেপ করতেন।’’

অভিযোগের ডালা সাজিয়ে নির্মাতা জানান, ‘‘অনন্ত কারখানায় কাজের চাপ ও ব্যবসায়িক ব্যস্থতার অজুহাতে শুটিংয়ে প্রায়ই দেরি করতেন। এছাড়া আমাকে ছাড়া অনন্ত তুরস্কে শুটিং করেছেন। সেখানে একটি দৃশ্যে নারীদের অশালীন নৃত্য শুটিং করা হয়েছে, যা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।’’

মোর্তজা এই বিষয়ে আরও বলেন, ‘‘চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের আইনকে শ্রদ্ধা করার কথা, কিন্তু তা করেননি অনন্ত। এছাড়া অনন্তের খামখেয়ালির কারণে সিনেমাটির শুটিং ব্যয় বেড়ে গেছে। তাছাড়া তিনি কারো অর্থই ঠিকঠাক মতো পরিশোধ করেননি। এর প্রতিবাদে আমরা কিছুদিন শুটিং বন্ধ রাখি। পরবর্তীতে কয়েকজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সমঝোতায় আবার কাজটি শুরু করি এবং অনন্ত সমস্ত বকেয়া পরিশোধ করে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়াও গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ট্রেলার প্রকাশ করলে সেই নিম্ন মানের ট্রেলার দেখে আমি বিব্রত হয়েছিলাম। তখন অনন্ত আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পরিবর্তন করেন। এর একমাস পর সিনেমার কিছু দৃশ্য আমাকে ইমেইল করা হলে, উত্তরে আমি বলেছিলাম, শিশুসুলভ হয়েছে। ’’

এতদিন কেন চু’প ছিলেন এমন সমালোচনার জবাবে মোর্তজা বলেন, ‘‘অনন্ত-বর্ষার বাসায় তিনি খাবার খেয়েছিলেন সে কৃত’জ্ঞতা থেকে। সিনেমাটির মু’ক্তির আগের দিন তাদের দুজনের কাছে ভাইবোন হিসেবে অনুরো’ধ করেছিলাম আমার বকেয়া যেন পরিশো’ধ করে দেন তারা। এমনকি আমার নামটি ছবির সব জায়গা থেকে বা’দ দিয়ে দেন। কিন্তু তিনি তা শুনেননি।’’

সংবাদ প্রকাশের হাতে আসা চু’ক্তিনামাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি সম্পন্ন হয় ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তে। তাতে প্রথম প’ক্ষ ধরা হয় মোর্তজা অতাশজমজমকে এবং দ্বিতীয় পক্ষ অনন্ত জলিল। চু’ক্তি অনুযায়ী অনন্ত জলিল হবেন বিনিয়োগকারী এবং মোর্তজা হবেন প্রযোজক। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রযোজক মূলত সিনেমাটি নির্মাণে সহায়তা করেন, তিনি আর্থিক কোনো বিনিয়োগ করেন না। চু’ক্তিনামায় বলা হয়েছিলো, অনন্ত বাজেটের ৫ লাখ ডলার ছয় কি’স্তিতে পরিশো’ধ করবেন।

 

চুক্তি স্বা’ক্ষরের ৮ মাসের মধ্যে সিনেমা মু’ক্তির কথা ছিলো। সিনেমার দৈর্ঘ্য হওয়ার কথা ছিলো ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। তিন মাসে মোট ৭০ দিনে শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিলো। মোর্তজার চু’ক্তিনামা প্রকাশের ব্যাপারে বক্তব্য না দিলেও অনন্ত আগের অভিযোগের ব্যাপারে বলেছিলেন, মোর্তজা মিথ্যে বলেছেন।

 

Link copied!