• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ


খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২১, ০১:০১ পিএম
কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জেরে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। একই সঙ্গে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিন্ডিকেট সভার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন। 

মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ৩টার দিকে মারা যান কুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন। তিনি কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। তার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, তাঁর মৃত্যুর আগে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। 

অধ্যাপক সেলিম হোসেনের মৃত্যুর পর অভিযোগ আসে, ওইদিন সকালে কুয়েট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনা ও অপদস্থের শিকার হওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন, তর্ক-বিতর্ক করছেন। পরে তারা তাকে অনুসরণ করে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে শিক্ষকের ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা প্রায় আধা ঘণ্টা কক্ষের ভেতর অবস্থান করে বেরিয়ে যান। পরে অধ্যাপক সেলিম বের হয়ে বাসায় যান।

ওই শিক্ষকের স্বজনরা জানান, বাসায় ফেরার পর ড. সেলিম বাথরুমে যান। বেলা আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, দীর্ঘ সময় হলেও সেলিম হোসেন বের হচ্ছেন না। এর পর দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতারা প্রভোস্ট ড. সেলিম হোসেনকে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগ নেতারা ওই শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং হুমকি দেন। ড. সেলিম এতে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান। এক পর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বুধবার উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। তারা ৫ দফা দাবি জানান। পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আগামী ৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে; তদন্ত কমিটির সদস্য পরিবর্তন করে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; কমিটির সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কমিটির সদস্যদের তালিকা নোটিশ বোর্ডে দিতে হবে; অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের আজীবন ছাত্রত্ব বাতিল এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে; নিহত শিক্ষকের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে; প্রতিটি হলের সব অংশ সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে; প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের নিরাপত্তায় সিকিউরিটি গার্ড নিযুক্ত করতে হবে।

অন্যদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছাত্রদের বহিষ্কারসহ শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না বলে ঘোষণা এসেছে।

শিক্ষক এবং ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, অধ্যাপক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় রোববার বিকালে শোক সভা করা হবে।

Link copied!