• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাবির প্যারিস রোড


সৈয়দ সাকিব, রাবি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৯:১২ এএম
সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাবির প্যারিস রোড

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অনিন্দ্য সুন্দর একটি জায়গা হলো প্যারিস রোড। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, এই রাস্তাটি এবং এর দুপাশের সুবিশাল গাছগুলোর সমন্বয়ে যে নান্দনিক একটি দৃশ্যের অবতারণা হয়, তা দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরাও। কিন্তু সময়ের আবর্তনে প্যারিস রোড হারাতে বসেছে তার স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য।

প্রায় ৫০ বছরের পুরনো এই প্যারিস রোডের দুপাশে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ গগনশিরীষ গাছগুলো। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকটি গাছ ইতোমধ্যেই উপড়ে গেছে; ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশেপাশের অন্যান্য গাছও। এদিকে ২০১৯ সালে রাস্তাটির একদিকে বসানো হয়েছে ফুটপাথ—যা রাস্তাটির যথেষ্ট সৌন্দর্যহানি ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

প্যারিস রোডের পুরনো কিছু ছবির সঙ্গে বর্তমান চিত্রের তুলনা করে দেখা যায়, রাস্তাটির দুপাশে সুবিশাল গগনশিরীষ গাছের পাতায় আচ্ছাদিত সবুজের সমারোহ অনেকটাই বিলীন হতে বসেছে।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাজশাহীতে বয়ে যাওয়া ঝড়ো বাতাসে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যারিস রোডের দুইপাশের বেশ কয়েকটি গাছ। প্রায় প্রতিবছরই কালবৈশাখীতে গাছগুলোর ডালপালা এভাবে ঝরে পড়ছে।

গাছগুলোর আয়ুষ্কাল সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবির জানান, গাছগুলোর আয়ু সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর। এখানে ১৯৬৫ সালে লাগানো হয়েছিল গাছগুলো। যা তাদের জীবনকালের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সে হিসেবে আর মাত্র কয়েক বছর বাঁচতে পারে গাছগুলো। এরপর গাছগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মারা যাবে।

জানা গেছে, প্যারিস রোডের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই গাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম Albizia richardiana. এটি কড়ইয়েরই একটি জাত। গবেষকরা জানিয়েছেন, গাছগুলোর carbon sequestration দক্ষতা খুবই ভালো। ফলে শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, গাছগুলো ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডের বর্তমান চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে তারা বিভিন্ন মন্তব্য লিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা হৃদয় আল মিরু লিখেছেন, “২০১৪ সাল থেকে প্রিয় প্যারিস রোডের এই অবস্থা শুরু। কমতে কমতে প্যারিস রোডের সেই সৌন্দর্য এখন আর আগের মতো নেই। এমন দৃশ্য মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভালো থাকুক প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রিয় রোড।”

উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে প্রশাসন

রাবির প্যারিস রোড এবং এর আশেপাশের সৌন্দর্য পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি নিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে পাসকৃত বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি। নয় সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ।

প্যারিস রোডের সৌন্দর্যবর্ধন প্রসঙ্গে ড. সাবরিনা বলেন, “আমাদের প্যারিস রোডের যেই গাছগুলো আছে, সেগুলোর চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। শুধু প্যারিস রোড নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তার পাশের গাছগুলো দেখভাল করেন পাঁচজন মালি। ওনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ পুরনো কর্মচারী; উদ্ভিদ লালন পালন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে। সীমিত পরিসরে, অল্প কিছু চারা হয়তো তারা তৈরি করেছেন; কিন্তু প্রতি বছরই আমরা সেগুলো প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছি।”

প্যারিস রোডকে ক্যাম্পাসের একটি ‘স্মারক রাস্তা’ উল্লেখ করে অধ্যাপক সাবরিনা বলেন, “নতুনভাবে চারা তৈরি একটি কঠিন কাজ; তবুও তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে এই রাস্তাটি একটি আবেগের জায়গা। পাঁচজন মালি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, বড় গাছগুলোর পাশে কিছু ছোট গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, রাস্তাটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে কিছু বিচ্যুতি যেগুলো হয়েছে, সেগুলো শেষ হয়ে গেলে গাছগুলো আবার জেগে উঠবে।”

প্রায় পাঁচ দশকের ঐতিহ্য ধারণ করছে রাবির এই রাস্তাটি। ১৯৬৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যে তৎকালীন উপাচার্য এম শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে গগণশিরীষের কিছু চারা নিয়ে আসেন। গাছগুলো রোপণের দায়িত্ব পান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক আলী মোহাম্মদ ইউনুস। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তার সঙ্গে সাদৃশ্যতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে শেরে-ই-বাংলা হল পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তাটি ক্যাম্পাসে প্যারিস রোড নামেই পরিচিত।

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!