• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

১৯ বছর ধরে পেটের ভেতর অস্ত্রোপচারের কাঁচি


মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০৭:২৮ পিএম
১৯ বছর ধরে পেটের ভেতর অস্ত্রোপচারের কাঁচি

একটি নয় দুটি নয় ১৯ বছর ধরে পেটের ভেতর অস্ত্রোপচারারের কাঁচি (নিডিল হোলডার) বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার হাপানিয়া গ্রামের বাচেনা খাতুন। অস্ত্রোপাচারের পর তার পেটের ভেতরেই ভুলক্রমে অস্ত্রটি রেখে দিয়ে সেলায় করে দেন চিকিৎসকরা। জমি, গবাদিপশু বিক্রি করে চিকিৎসা করে এখন নিঃস্ব পরিবারটি। রোববার (২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে এক্সরে করে ধরা পড়ে বিষয়টি।

সরেজমিনে হাপানিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে পাড়া প্রতিবেশীদের ভিড়। সবার মুখে মুখে একই আলোচনা। দেখতে এসেছেন বাচেনা খাতুনকে। পরিবারের সদস্যদের চোখে মুখে চিন্তার ভাজ। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। চিকিৎসা করতে গিয়ে নি:স্ব হয়ে যাওয়ায় এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। চিকিৎসার খরচ বহন করবেন কিভাবে।

মেহেরপুরের শেষ সীমানা চুয়াডাঙ্গার হাপানিয়া গ্রামে জীর্ণ একটি কুটিরে বসবাস বাচেনা খাতুন ও স্বামী আব্দুল হামিদের। স্বামী প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। ২০০২ সালের ঘটনা। বাচেনা খাতুনের পেটে ব্যথা হলে শরণাপন্ন হন মেহেরপুর গাংনী উপজেলা শহরের রাজা ক্লিনিকে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন অস্ত্রোপচারের। ঐ ক্লিনিকেই অস্ত্রোপচার করেন বাচেনা খাতুন।

অস্ত্রোপচার করেন সার্জারি চিকিৎসক (অব.) ডা. মিজানুর রহমান, সঙ্গে ছিলেন ক্লিনিক মালিক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা। এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ছিলেন ডা. তাপস কুমার সরকার। অপারেশন হওয়ার পর থেকেই আর সুস্থ হতে পরেননি বাচেনা। দিনের পর দিন ভুগেছেন পেটের ব্যথায়। নিজের শেষ সম্বল জমি, গরু ছাগল, গবাদিপশু সব বিক্রি করে ব্যয় করেছেন চিকিৎসায়। তার পরেও ব্যথা কমেনি। অবশেষে গেল ২ জানুয়ারি রাজশাহীতে এক চিকিৎসকের পরামর্শে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এক্সরে করে তার শরীরের ভিতরে অস্ত্রোপচারারের কাঁচি (নিডিল হোলডার) ধরা পড়ে। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পুরো পরিবার। কি করবেন ভেবে উঠতে পারেন না। 

ভুক্তভোগী বাচেনা খাতুন বলেন, পেটের ভিতরে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা করতো। পরে রাজশাহী গিয়ে এক্সরে আল্ট্রাসনোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় পেটের ভিতরে কাঁচি আছে। ডাক্তাররা অবাক হয়ে আবারও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। তারপরেও একই ঘটনা ঘটে। আশেপাশের মানুষজন ছুটে আসে দেখতে। আমার সম্পদ, জমি জায়গা সব বিক্রি করে দিয়েছি। আমার দাবি এতো দিন আমি এই কষ্টে ভুগছি আমাকে সুস্থ করে তুলতে হবে আর আমার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। না দিলে আমি আইনের ব্যবস্থা নিব। সোমবার রাজা ক্লিনিকের মালিক আমাদের আশ্বাস দিয়েছে আমাদেরা অস্ত্র পাচারের সমস্ত দায়িত্ব নেবেন। মঙ্গলবার অস্ত্র পাচারের কথা রয়েছে।

চিকিৎসকের এমন উদ্ভট কাণ্ডে হতবাক এলাকার মানুষজন। সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছেন তাকে দেখার জন্য তারা বলছেন, মানুষকে সেবা দেওয়ার নাম করে এসব ক্লিনিক ব্যবসা করছে। অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকেরা বলেন, এই কাজটি খুবই খারাপ হয়েছে। তাদের গাফলতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তারা মনোযোগ দিয়ে এই অস্ত্রোপাচার করলে এমন হতো না। এটা আমরা কামনা করি না।

গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকের স্বতাধিকারী ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা বলেন, “এই ধরনের ঘটনার জন্য আমি খুবই মর্মাহত। আমি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা সেই সময় অপারেশন করেছেন তারা কোথায় আছে আমি জানি না। যারা অপারেশন করেছে, আমাদের টিমের কোথাও হয়তো কোন ভুল হয়ে হয়তো এটা হয়েছে। এতো দিন ধরে হয়তো এটা ধরা পড়েনি এখন ধরা পড়ছে। এটা পেটে থেকে বের করতে গেলে অপারেশন করাতে হবে। সেই জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমি নিয়েছি।”

মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. জাওয়াহেরুল আনাম সিদ্দিকী বলেন, “এখন পর্যন্ত আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তদন্ত করার পূর্বে লিখিত অভিযোগ দরকার। যদি আমি লিখিত অভিযোগ পাই তাহলে আমি তদন্ত করব।”

Link copied!