• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

হাকালুকিতে বেপরোয়া পাখিশিকারিরা


রাজীব রাসেল, সিলেট
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২২, ১০:৫৬ এএম
হাকালুকিতে বেপরোয়া পাখিশিকারিরা

শীতের শুরুতে প্রতিবছর হাকালুকি হাওরে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখি। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হাকালুকির বিভিন্ন বিলে হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা যেন পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল-জলাশয় থেকে পাখিরা এসে আশ্রয় নেয় হাল্লার পাখিবাড়ির বিভিন্ন গাছগাছালিতে। আবার ভোর হলেই পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে হাওরের বিভিন্ন বিলবাদাড়ে।

এবার পাখি আসা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে উঠেছে পাখিশিকারি চক্র। তারা বিষ টোপসহ নানাভাবে ফাঁদ পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে। কিন্তু পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে পাখি শিকার কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাখিপ্রেমী ও স্থানীয়রা। তারা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে নানা প্রজাতির পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, গুটি ইগল, কাস্তেচড়া, কুড়া ইগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, সাদা বক, কানি বক ও পানকৌড়ি। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখিও রয়েছে।

সরেজমিনে হাকালুকি হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, হাওরে দল বেঁধে নানা প্রজাতির পাখি ওড়াউড়ি করছে। কিছু পাখি বিভিন্ন বিল থেকে খাবার খাচ্ছে। কিছু পাখি খাওয়া শেষে নীড়ে ফিরছে। হাওরের বিভিন্ন বাড়ির গাছগাছালিতে এসব পাখি বাসা বেঁধেছে। পাখিদের কলকাকলিতে হাওর এলাকা মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন পরিবার-পরিজন নিয়ে হাওরে পাখি দেখতে আসছেন।

স্থানীয়রা জানান, হাওরে অতিথি পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। চক্রটি রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে হাওরে পাখি শিকার করছে। ধানের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া তাদের বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা এসব পাখি বিভিন্ন বাজারে মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে বিক্রিও করছে। বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে। এমনকি অনেক প্রভাবশালীদের ঘরেও এসব পাখি যাচ্ছে।

হাওরের হাল্লা গ্রামের বাসিন্দা আক্তার আহমদ শিপু ও হিমেল আহমদ বলেন, “হাওরে প্রতিবছরের মতো এবারও অতিথি পাখি আসছে। এসব পাখির নিরাপদ আবাসস্থল আমাদের বাড়ি। তারা আমাদের বাড়ির চারপাশে থাকা গাছে বাসা বাঁধার পাশাপাশি ঘরের টিনেও বসছে। পাখিগুলোকে আমরা তাড়িয়ে দেই না। যার কারণে বছরজুড়ে পাখিগুলো আমাদের বাড়িতে থাকে। শুধু শীতে দেশের বাইরে থেকে অতিথি পাখি আসে।”

তারা বলেন, “পাখি শিকার বন্ধে আমরা অনেক সময় রাতে পাহারা দেই। এরপরও শিকারিরা পাখি শিকার করছে নানাভাবে ফাঁদ পেতে। পাখি শিকারে বাধা দিলে অনেকে হুমকি দেয়। তাই অনেক সময় ভয়ে কথা বলি না। প্রশাসন যদি এখানে (হাওরে) স্থায়ীভাবে লোকজন দেয় তাহলে হয়তো কেউ পাখি মারতে পারবে না।”
 
স্থানীয় এক পরিবেশকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হাওরে পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর কারণ হচ্ছে, অবাধে পাখি শিকার, পাখির আবাসস্থল ধ্বংস ও খাদ্যসংকট। পাখি শিকার বন্ধ না হলে এখানে পাখি আর আসবে না। তা রোধ করতে হলে প্রশাসনের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে হবে।”

বন বিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “পাখি শিকার বন্ধে আমরা কাজ করছি। মানুষকে সচেতন করছি।”

এ ব্যাপারে বড়লেখার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, “শীতকালে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখি আসে। অতিথি পাখি হাওরের জীববৈচিত্র্যের একটি অংশ। পাখি শিকার রোধে আমরা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও যদি কেউ পাখি শিকার করে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

Link copied!