পাবনার সাঁথিয়া হানাদারমুক্ত দিবস বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাঁথিয়া থানার নন্দনপুর ও জোড়গাছায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের পর সাঁথিয়া সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এলাকার ছাত্র, যুব তরণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। যুদ্ধ অনিবার্য এটা আঁচ করতে পেরে এলাকার ছাত্র যুব তরুণরা সংগঠিত হতে থাকেন। সাঁথিয়া হাইস্কুল মাঠে তারা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ এলাকার বহু যুব তরুণেরা সাঁথিয়া থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুট করে। পরে স্থানীয় পশু হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিনসহ এলাকার বহু যুব তরুণেরা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৯ মাস সাঁথিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নিরীহ মানুষ শহীদ হন। ১৯ এপ্রিল সাঁথিয়ার পাইকরহাটির ডাব বাগান (বর্তমানে শহীদ নগর) যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিযোদ্ধা, ও ইপিআর বাহিনীর। ওই যুদ্ধে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় দুইশত নিরীহ গ্রামবাসী শহীদ হন।
২৬ সেপ্টেম্বর সাঁথিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করে এবং অনেক অস্ত্র উদ্ধার করে।
সাঁথিয়ায় সবচেয়ে নারকীয় ও বেদনাদায়ক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ীতে। ওই দিন পাকসেনারা বাড়িঘর জ্বালিয়ে রাতের অন্ধকারে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ১০০ জন গ্রামবাসীকে পুড়িয়ে, গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়ার সব মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে থানা সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে নন্দনপুর রণাঙ্গণে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে চূড়ান্ত মোকাবিলায় মুখোমুখি হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটে পাবনা শহরে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পাকিস্তানি হানাদাররা সাঁথিয়া পুনর্দখলের চেষ্টা করে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কের নন্দনপুর-জোড়গাছার মধ্যবর্তী ব্রিজটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেন। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র বাঁধার মুখে পাক সেনারা আবার পিছু হটে পাবনা শহরের দিকে চলে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সাঁথিয়া থানাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
সাঁথিয়া উপজেলা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ জানান, দিবসটি পালন উপলক্ষে সাঁথিয়া উপজেলা কমান্ড দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ। বেলা ১১টায় আনন্দ র্যালিও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।