মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা ছিল, সেটি পূরণ হয়েছে।”
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এ কথা বলেন।
শারমিন বলেন, “রায়ে সাতজন বেকসুর খালাস পেয়েছে। এদের কোরো কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না, তা নয়। এদেরও কিছু সাজা হলে প্রত্যাশা আরো বেশি পূরণ হতো।”
“সন্তুষ্ট হবো রায় কার্যকর হলে। বিজ্ঞ আইনজীবীরা অনেক কষ্ট করে তারা চুলছেড়া বিশ্লেষণ করেছেন। অনেক কাজ করেছেন। এই জন্য তাদের ধন্যবাদ।” বলেন শারমিন ফেরদৌস।
এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ওসি প্রদীপসহ এ মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়। দুপুর ২.২৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। এদিন ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েছেন বিচারক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনাস্থলে পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতের সক্রিয়তা প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার সকাল থেকে আদালত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালতসংলগ্ন এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ মামলার ১৫ আসামি হলেন কক্সবাজারের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, এএসআই সাগর দেব, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা ও রুবেল শর্মা। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। সিনহার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজও এই মামলার আসামি।
এর আগে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। পরে ৩১ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ফরিদুল ইসলাম যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে ১৫ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর ওই বছরের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় আসামি করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় মোট ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।