নড়াইলের প্রধান সড়কের ৩ কিলোমিটার জুড়ে কেবলই ছবি। নানা রংয়ে, নানা ঢংয়ে শিল্পীরা নিজের মতো করে এঁকেছেন একুশের চেতনা আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর চিত্র। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে নড়াইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজের কুড়িরডোপ মাঠ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তায় আঁকা হয়েছে পথচিত্র। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে শিল্পীর তুলিতে।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই পথচিত্র শেষ হয়েছে রোববারে (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে। দেশের ইতিহাসে এটাই দীর্ঘতম পথচিত্র।
শনিবার সন্ধ্যায় নান্দনিক পথচিত্র অংকন শুরু হলেও রাত ৯টায় শহরের চৌরাস্তায় উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এ সময় পথচিত্র বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম, পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম লিটু, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার পিতা গোলাম মর্তুজা উপস্থিত ছিলেন।
পথচিত্রে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন, যেমন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বিভিন্ন বর্ণমালা, স্বাধীনতার বিভিন্ন শ্লোগান, গ্রাম বাংলার চিত্র, আলপনা ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। এ কাজে ৪ হাজার লিটার রংয়ের জন্য ১৬ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
মুক্তিযুদ্ধের মতো ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে পুরো পথ। ১১ জন স্বেচ্ছাসেবক সেক্টর কমান্ডার ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে রাতভর কাজ করেছেন। এস এম সুলতানের শিষ্য শিল্পী সমীর কুমার মজুমদার, কাশেম, স্থপতি বিধান কুমার সাহা, আর্ট কলেজ শিক্ষক সমীর মজুমদারসহ ১১ জন শিল্পী স্বেচ্ছাশ্রমে শেষ করেছেন চেতনার কাজ।
১ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বে থাকা এস এম সুলতানের শিষ্য শিল্পী সমীর কুমার মজুমদার বলেন, “আমরা শিল্পীরা মোট ১১টা সেক্টরে ভাগ হয়ে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ সরকারের উন্নয়ন রং তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।”
এসএম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ চিত্রশিল্পী অনাদী বৈরাগী বলেন, “পথচিত্রে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমরা।”
নড়াইল জেলা পরিষদ সদস্য রওশন আরা কবীর বলেন, “প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার লিটার রংয়ের ব্যবস্থা করেছেন নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজা। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
জেলায় প্রথমবারের মতো এই পথচিত্র দেখতে রাতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। এতবড় পথচিত্র দেখে অবাক স্থানীয়রা। গৃহিণী পশমী খান বলেন, “আমাদের নড়াইলেই এটা সম্ভব হয়েছে। বলার ভাষা নেই, আমরা আবেগাপ্লুত।”
পথচিত্র বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শহীদদের স্মরণে ব্যতিক্রমী এই পথচিত্র অংকনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা শহীদদের সম্পর্কে আরও ভালো জানতে পারবে।”