‘নিজের যোগ্যতায় পুলিশের প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করেছি। অথচ জমি না থাকার কারণে আমার চাকরি হবে না কেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। আমি তো যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সকল পরীক্ষায় পাস করেছি। তাহলে কেন আমার চাকরি হবে না?’
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও স্থায়ী ঠিকানার অভাবে আটকে যাওয়া পুলিশের চাকরিপ্রার্থী আসপিয়া ইসলাম কাজলকে বরিশাল পুলিশ লাইনসের মূল ফটকের সামনে হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। সেখানেই গণমাধ্যমকর্মীদের এভাবেই কথাগুলো বলেন তিনি।
আসপিয়া বরিশালের হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা বলে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা গেছে। তার বাবা প্রয়াত শফিকুল ইসলাম ভোলার চরফ্যাসনের নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে বরিশালের হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ব্যবসা করতেন।
আসপিয়া আরও বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যোগ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছেন। সেখানে যোগ্য লোকের চাকরি জমি না থাকার কারণে হবে না এটি সঠিক বলে মনে করি না। আমার চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
আসপিয়ার মা ঝরনা বেগম বলেন, “অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। তার চাকরি হয়েছে। কিন্তু আমার জায়গা-জমি না থাকায় চাকরি নাকি হবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই। যে করেই হোক আমার মেয়েকে চাকরিটি দিন। আমি তো আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দেশের নাগরিক।”
বড় জালিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ঝন্টু বেপারী বলেন, “আসপিয়াকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। ওর বাবা সৎ মানুষ ছিলেন। কিন্তু ৫-৭ বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যান। এরপরই ওই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। আছপিয়ার এক চাচা ইঞ্জিনিয়ার। সম্ভবত দাদা বাড়ির সঙ্গে ভালো সর্ম্পক নেই।”
তবে দাদা বাড়িতে ওরা বেশ জায়গা-জমি পাবে বলে জানিয়েছিলেন তার বাবা শফিকুল।
জানা যায়, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপাররা। এরপরও আসপিয়ার বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি করলে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান নিজেও একটি স্ট্যাটাস দেন তার ফেসবুকে।
সেখানে ডিআইজি লিখেন, “বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায়, কাজে যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে আমি অনেক খুশি হব। আর এর জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি (চাকরি) যেন ধরা দেয়।”