পাবনার বেড়া পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছেলে ও ছোট ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দিনদিন বেড়েই চলছে।
চাচা-ভাতিজার সমর্থকদের মুখোমুখি অবস্থানে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নৌকার গণসংযোগে অতর্কিত হামলার পাশাপাশি কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করার অভিযোগ বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল বাতেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে বেড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আসিফ শামস রঞ্জনের নৌকার গণসংযোগে পৌর সভার সুম্বুপাড়া মহল্লা ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক আব্দুল জব্বার (৩২), সাইদুল ইসলাম গায়েন ( ৪০), সাদ্দাম হোসেন (৩৩), কালু গায়েন (৪২), মহিলা খাতুন (৩৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, রাতে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে নৌকার ভোট চাইতে গণসংযোগ করার সময় বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে অগ্রসরের সময়ে রাত ৯টার দিকে মেয়র বাতেনের সমর্থক জাহাঙ্গীর খা ও সামসুল আলমের নেতৃত্বে ৮/১০ জনের একদল বাহিনী রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দিকে গণসংযোগ নিয়ে গেলে কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসময় ধাওয়া দিলে তারা পালানোর সময়ে জনতার রোষানলে পড়ে কয়েকজনকে গণধোলাই দিলে আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্বে পৌরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা শীতের মতো জেঁকে বসেছে। এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। ভোটের দিন বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। প্রতিদিনই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামসুল হক টুকুর ছেলে অ্যাডভোকেট আসিফ শামস রঞ্জন বলেন, “মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য আমার সমর্থকেরা গণসংযোগ করতে পৌর এলাকার সুম্বুপাড়া মহল্লায় মোড়ে পৌঁছায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে নারিকেল গাছ মার্কার প্রার্থী আব্দুল বাতেনের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। পরে কয়েকটি ককটেল ও নিক্ষেপ করলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় ও মারপিট করে।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ও শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, “জনসমর্থন না পেয়ে নৌকার প্রার্থী রঞ্জন তার এমপি পিতাকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে সেটা সবাই অবগত। আমাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে এখনো চেষ্টা করছে। আমার কর্মীদের হয়রানি করতেই তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নিজেরা গণসংযোগে হামলা চালিয়ে ককটেল নিক্ষেপ করেছে।”
বেড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, “উভয়পক্ষের গণসংযোগের সময় সংঘর্ষের সৃষ্টি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানতে পেরেছি। কেউ এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে পুলিশ ককটেল উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুর আলী বলেন, “অবিষ্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ককটেল নিষ্ক্রিয় করতে থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
আগামী (২৮ নভেম্বর) তৃতীয় ধাপে পাবনার বেড়া পৌর সভার মেয়র পদে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।