বিদায় ও নববর্ষ ঘিরে প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। তবে এবার থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজারে কোনো অনুষ্ঠান না থাকায় পর্যটকের উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। ভরা মৌসুম ও বছরের শেষ দিনে এসেও আশানুরূপ পর্যটক আসেনি কক্সবাজারে। সম্প্রতি ধর্ষণসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনায় এ ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল-মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, বছরের শেষ সময়ে এসেও বেশির ভাগ কক্ষ বুকিং হয়নি। অথচ অতীতে আগেভাগেই বুকিং হয়ে যেত শতকরা ৯৫ ভাগ কক্ষ। এ অবস্থার জন্য দুটি বিষয়কে সামনে এনেছেন তারা। খাবারের দাম নিয়ে অপপ্রচার এবং নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা।
জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনায় তারা কিছুটা বিব্রত। তবে পর্যটকবান্ধব কক্সবাজার গড়তে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি বলেন, “সরকারি চাকরি তাই বছরে খুব একটা ছুটি পাওয়া যায় না। ডিসেম্বর এলে ইচ্ছে হয় পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি। ভ্রমণের জন্যে আমার পছন্দের জায়গা কক্সবাজার। ছুটি পেলেই অন্য কোথাও না গিয়ে সোজা কক্সবাজার চলে আসি। কিন্তু এবার নিউজে কিছু ঘটনা দেখে আসতে ইচ্ছে করছিল না। তবুও সাহস করে চলে এলাম। আমরা চাই নিরাপদ কক্সবাজার। সংশ্লিষ্টদের উচিত এবিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া।”
রাজশাহী থেকে সৈকতে আসা রহিম, শাহীন ও সাদিয়া বলেন, “থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার এসেছি। খুব আনন্দ করতেছি। এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বিচের কিছু ফটোগ্রাফারের যন্ত্রণা ভ্রমণকে বেদনায় পরিনত করে।”
হোটেল কক্স টুডের ব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, “করোনা সংক্রমণের আগে থার্টি ফাস্ট নাইট ঘিরে কম করে হলেও ৯৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রীম ভাড়া হয়ে যেত। এবারও আমরা তেমন আশা করেছিলাম। তবে পর্যটক সমাগমের প্রবণতায় ভাটা দেখছি। যারা ফোন করছেন, প্রথমেই নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইছেন। কিন্তু কী জবাব দেব। এবারে সে রকম ব্যবসা নাও হতে পারে।”
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, “অতিরিক্ত দাম রাখার ভুল মেসেজ আর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বড় ক্ষতি করে ফেলল। করোনার কারণে টানা লোকসানে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে এমন ঘটনায় এখন এত বড় একটা দিনে ৫০ শতাংশ বুকিংও পাচ্ছি না। যা কক্সবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন।”
হোটেল গ্রান্ড বিচের ব্যবস্থাপক শাহ নেওয়াজ বলেন, “আমাদের মোটামুটি ভাড়া হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম৷ আশা করছি পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত হলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কক্সবাজার পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বসবাস প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের। এর বাইরে শতাধিক আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দাতা সংস্থায় কর্মরত প্রায় পাঁচ হাজার বিদেশি এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থায়ী-অস্থায়ী ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় শহরের বিভিন্ন স্থানে ৬৪টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে এসব সিসিটিভির বেশির ভাগই অকেজো হয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আয়াছুর রহমান বলেন, “কক্সবাজার ভৌগোলিকভাবে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছে। একে পর্যটন শহরে রূপ দেওয়ার মতো কিছুই হয়নি। এতগুলো সংস্থা থাকার পরও কেন ছিনতাই বা পর্যটক হয়রানি হবে। শুধু ব্যক্তিস্বার্থ নিয়েই পড়ে আছে সবাই।”
পর্যটন জোনে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “থার্টি ফার্স্টে অনুষ্ঠান না থাকায় পর্যটক কম সৈকতে। তবে স্থানীয় ভ্রমণপ্রেমীদের কিছুটা আগমন ঘটেছে। এরপরও পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, “সৈকতে বা পর্যটন জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আমরাও কাজ করছি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটে। বেশকিছু আসামি আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে কীভাবে উঠে আসা যায় সেদিকে নজর রেখে কাজ চলছে।”
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, “এবারে থার্টিফাস্ট উপলক্ষে কক্সবাজারে কোনো আয়োজন নেই। পর্যটন সেবার মান উন্নয়নের জন্য সাত দফা পদক্ষেপ নিয়েছি। কোথাও যেন কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”