দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথ। এখানে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের জন্য ফেরিঘাটের সঙ্গে শুধু যাত্রী পারাপারের জন্য রয়েছে লঞ্চঘাটও। এই লঞ্চঘাট ঘাট ব্যবহার করে কয়েক হাজার যাত্রী পারাপার হয়ে থাকেন। এই লঞ্চঘাটের সঙ্গে সংযোগ সড়কের যে সেতু দুটি রয়েছে সেগুলো প্রায় ৭-৮ মাস ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। যেগুলো ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীদের সুবিধার্থে কাঠ ও লোহার তৈরি আলাদা দুটি ছোট সেতু রয়েছে। গত বর্ষায় নদী ভাঙনে সেতু দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে সেতু দুটি।
প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বন্ধ সেতু দুটি মেরামতের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলেও এ নিয়ে কোন তৎপরতা নেই বিআইডাব্লিটিএর।
এদিকে ব্যবহার অনুপযোগী সেতু দুটির জন্য দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্মিনাল ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নারী, শিশু ও বয়স্কদের। এছাড়াও যাত্রীদের ভারী মালামাল পরিবহন করতেও সমস্যা হচ্ছে।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ সেতু দুটিই বন্ধ থাকায় লঞ্চে ওঠানামার জন্য বর্তমানে বিকল্প যে পথ করা হয়েছে তা অনেক ঢালু ও উঁচু-নিচু। পথটি করা হয়েছে সেতুটির নিচ দিয়ে। বয়স্কদের এই পথ দিয়ে চলাচলের জন্য পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।
আহমদ আলী মাস্টার নামের এক যাত্রী বলেন, “এই লঞ্চ ঘাট দিয়ে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু কয়েকমাস ধরে দেখছি লঞ্চ টার্মিনালে যাওয়ার সংযোগ ব্রিজটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে করা হয়েছে টার্মিনালে যাওয়ার পথ।”
লঞ্চে দৌলতদিয়া ঘাটে আসা যাত্রী সেলিনা নামের যাত্রী বলেন, “ছোট বাচ্চা রয়েছে নিয়ে এই উঁচুনিচু পথে উঠবো কিভাবে? নিজের ভারসাম্য রাখায় এখানে কঠিন সেখানে কোলে আবার বাচ্চা আছে।”
গোয়ালন্দ উপজেলার নির্বাহী অফিসার আজিজুল হক বলেন, “আমি বিআইডাব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে লঞ্চঘাটটির স্থান পরিবর্তন হবে, তাই এই সেতু দুইটি সংস্কার করা হচ্ছে না। তবে, যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য অস্থায়ী ভাবে মেরামত করে অন্তত চলাচলের উপযোগী করার জন্য তাদের বলা হয়েছে।”
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ আলম বলেন, “গত বছর বর্ষায় নদীভাঙনে লঞ্চঘাট ও সেতু দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের লঞ্চঘাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সেতু দুটি মেরামত কাজে দেরি হচ্ছে।”
দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্মিনালে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক আফতাব হোসেন বলেন, “প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নদী পার হয়ে থাকেন। কাঠের ও লোহার তৈরি সেতু দুটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। সেতু দুটি বন্ধ হওয়াতে যাত্রীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”