• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বহিষ্কার-আতঙ্কে শেরপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম
বহিষ্কার-আতঙ্কে শেরপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা

শেরপুর জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভুগছেন বহিষ্কার-আতঙ্কে। দলের উচ্চ পদধারী দুই নেতার বহিষ্কার আদেশে এই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেলা ও শহর বিএনপি নামে পরিচালিত আইডি থেকে আরও কয়েকজনের নামে বহিষ্কারের চিঠি আসতে পারে এ, ধরনের স্ট্যাটাসে দলের স্পষ্টবাদী ও ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিতরাও এখন চুপসে গেছেন। ওই নেতারা বলছেন, টাকার বিনিময়ে পদ-পদবি বাণিজ্য ও দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা করার কারণে একের পর এক নেতা বহিষ্কারের মুখে পড়ছেন। 

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদ্য ঘোষিত মহিলা দলের ১ নম্বর উপদেষ্টা মোসা. নুরজাহান বেগম ১৫ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ-পদবি বাণিজ্যের অভিযোগ এনে শেরপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টার মাথায় তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে বহিষ্কারের একটি চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। 

এর আগে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন দলে কোন্দলের বিষয়ে সমালোচনা করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় তিনিও বহিষ্কারের শিকার হন। 

গেল ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সুলতানা রাজিয়াকে সভাপতি এবং রায়হানা আক্তার লিপিকে সাধারণ সম্পাদক করে মহিলা দল শেরপুর জেলা শাখার ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নুরজাহান বেগমকে ১ নম্বর উপদেষ্টা পদে রাখা হয়। 

নুরজাহান বেগম অভিযোগ করে বলেন, “ওই ৬৬ জন সদস্যের মধ্যে ৪-৫ জন ছাড়া বাকিরা কেউ কোনো দিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। এটি অবৈধ এবং মনগড়া পকেট কমিটি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী ও তার আরেক সহযোগী এই কমিটি অনুমোদনে সহায়তা করেছেন।” 

নুরজাহান বেগমের আরও অভিযোগ, দলের অঙ্গ সংগঠনের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী টাকা দিলে পদে থাকছেন, আর না দিলে পদবঞ্চিত হচ্ছেন। পদে আসতে দশ হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।  

দলে অরাজকতা চলমান থাকায় বহু নেতা-কর্মী ঝিমিয়ে পড়েছে উল্লেখ করে নুরজাহান বলেন, কর্মী না থাকায় সাধারণ সম্পাদক তার গুটি কয়েক অনুসারীদের নিয়ে নিজ বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, সাধারণ সম্পাদক তার একক সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল চলবে এমন কথা বলা হলেও তিনি তা মানছেন না। আর দল পরিচালনায় প্রতিটি পদক্ষেপ দলীয় ফোরামে উত্থাপনের বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হলেও তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন। 

দলের পদ-পদবি কেনাবেচার বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা বলেন, দুর্নীতি মামলায় হযরত আলী প্রায় সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলেন। তাই পদ বিক্রি করে সেই আর্থিক ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই নেতারা বলেন, দলে এখন বহিষ্কার আতঙ্ক চলছে। তাই তারা নিজেদের পদ বাঁচানোর তাগিদে খবরে নিজের নাম পরিচয় প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। 

জেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নামে পরিচালিত ফেসবুক আইডি ভিজিট করে দেখা যায়। গেল ১৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলা ও শহর বিএনপি নামে আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়—বিএনপিতে আবার যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট করার পাঁয়তারা করে তাকে নুরজাহান বেগমের মতো দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, সতর্ক হয়ে যান। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ, জেলা বিএনপি এখন বিগত দিনের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।

ওই স্ট্যাটাসের বিপরীতে কমেন্ট বক্সে সাজু আহমেদ নামে এক বিএনপির সমর্থক লেখেন—সব বহিষ্কার করে শেরপুরের মধ্যে একজন থাকলে আরও ভালো হবে। ক্ষমতায় নেই এখনই এই অবস্থা, ক্ষমতায় থাকলে তো মানুষ খুন করবে কথায় কথায়। 

একই ফেসবুক আইডি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি আরেকটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়—ব্রেকিং নিউজ। খুব শিগগিরই শেরপুর বিএনপি ও অঙ্গ দলের আরও কয়েকজনের বহিষ্কারের চিঠি আসতে পারে। 

ওই স্ট্যাটাসের বিপরীতে কমেন্ট বক্সে তামিজ আহমেদ নামে এক বিএনপি সমর্থক লেখেন—শেরপুরে ইদানীং ভাইয়ের রাজনীতি চলতাছে, যার যেমন খুশি দল চালাচ্ছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হতে গড়া দল বিএনপিকে তারা অন্তর থেকে চায় না, দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ। দলকে সুসংগঠিত না করে ধ্বংস করতেছে তারা। প্রকৃত দোষীর শাস্তি হোক, তবে ভাইয়ের রাজনীতি চাই না। 

টাকার বিনিময়ে দলীয় পদ-পদবি বিক্রিসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী। এ সময় দলীয় পদ বিক্রির এমন অভিযোগ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলায় তিনি প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “আপনি একজন শিল্পপতির সঙ্গে কথা বলছেন। অভিযোগের লিখিত ডকুমেন্ট ছাড়া কথা বলবেন না।”

Link copied!