• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
নাসিক নির্বাচন

প্রচারণার শেষ দিনে যা বললেন আইভী ও তৈমুর


নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২, ০৯:৫২ পিএম
প্রচারণার শেষ দিনে যা বললেন আইভী ও তৈমুর

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি)। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার নাসিকবাসীর জন্য নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। দুই প্রার্থী নিজেদের জয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।

২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি ধানের শীষ নিয়ে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি। নৌকার কাছে তারা হারে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে। এবার তৃতীয় নির্বাচনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিলেও তৈমুরের অংশগ্রহণ রাজধানী-লাগোয়া জনপদটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াইয়ের আমেজ এনে দিয়েছে।

১৬ তারিখ নৌকার জয় হবে সুনিশ্চিত বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আজ বিকেল ৪টায় শহরের দুই নম্বর রেলগেটে আওয়ামী লীগের পথসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আইভী বলেন, “আমাকে আপনারা আবারও ৫ বছর সেবা করার সুযোগ দেন। আমার বাবার মতো আপনাদের খেদমত করতে চাই। যেকোনো সময় আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটতে পারে। আমি আপনাদের জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিতে রাজি আছি। আমি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী-চঞ্চল হত্যার জন্য আমার জীবন বাজি রেখেছি। পুনরায় বাজি রাখতে রাজি আছি। কখনো নিজের ঘরের সংসার সন্তানের দিকে তাকাই নাই। আপনাদের সেবা করতে এসেছি। আমাকে আপনারা আবারও সেবা করার সুযোগ করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।”

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর ছোট একটা কর্মী। আমি চেষ্টা করেছি এই শহরের মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য। আমার বাবা চুনকা এ শহরে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন। উনি একনিষ্ঠভাবে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুপ্রেরণায় ছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। আমি বাবার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আবার বাবা বলেছে মানুষের মাঝে খোদা বিরাজমান। যদি মানুষকে সেবা করতে চাও তাহলে মানুষের কাছে যাও। আমি আমার বাবার কথা শুনে আপনাদের কাছে এসেছি। আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি।”

পথসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী যদি আইভীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন, তাহলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের সব দায়িত্ব তার।”

ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান বলেন, “রোববারের ভোটে আইভীকে রুখে দেবে এমন শক্তি নারায়ণগঞ্জে নেই।”

তৈমূর আলম খন্দকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “প্রথমে বলেছিলেন বিএনপির প্রার্থী। তারপর বললেন, বিএনপির প্রার্থী না। তারপর বললেন মানুষের প্রার্থী। তারপর বললেন হাতি মার্কার প্রার্থী। কিন্তু আমি বলতে চাই, রোববার বনের হাতি বনে ফিরে যাবে, নৌকার বিজয় হবেই।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হলে এই নগর উন্নত-সমৃদ্ধ হবে, সেই ওয়াদা আপনাদের সামনে এসে করে গেলাম। তার পক্ষেই সম্ভব হবে এই এলাকার উন্নয়ন।”

এদিকে শুক্রবার প্রচারের শেষ দিনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ভাগ্যের পরিবর্তন চাইলে সব ভয়ডর দূরে সরিয়ে হাতি মার্কায় ভোট দিতে স্মার্টকার্ড নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় মিশনপাড়া এলাকায় প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন তৈমুর আলম। বেলা ১১টায় মাসদাইর নিজ বাসভবনে পোলিং এজেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। দুপুরে মাসদাইরের বায়তুল আমান জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে বিকালে বন্দর এলাকার সিরাজউদ্দোলা মাঠে পথসভা করেন। 

তৈমুর আলম অভিযোগ করেন, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সম্মানিত মেহমান, সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তারা পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। বহিরাগত এসব ব্যক্তির বক্তব্য পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দিচ্ছে। এমনকি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে বহিরাগত মানুষজন আনা হচ্ছে। এতে নারায়ণগঞ্জের মানুষ শঙ্কিত।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৈমুর বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আনা হচ্ছে। এদের কারণে ভোটাররা শঙ্কিত। নির্বাচনকে ঠুটো জগন্নাথ আখ্যা দিয়ে তৈমুর বলেন, একাধিকবার আচরণবিধি ভঙ্গে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও নির্বাচন কমিশন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। নির্বাচন কমিশন সব দেখেও না দেখার ভান করছে। 

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তৈমুর বলেন, নির্বাচন থেকে বসে পড়ার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, “নির্বাচন কক্ষের সিসিটিভি বন্ধ রাখতে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের কেন্দ্রপ্রধানদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আমি মনে করি, ভোট চুরিতে সুবিধার জন্যই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকেই সিসিটিভি স্থাপনের জন্য বলা হয়, সেখানে ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি বন্ধের নির্দেশনার অর্থ কী দাঁড়ায়, সেটা না বোঝার কিছু নেই।”

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বলেন, “পুলিশের একচোখা আচরণ বন্ধ করতে হবে। যদি আমাকে এক চোখে দেখে, আর সরকারদলীয় প্রার্থীকে আরেক চোখে দেখে, তাহলে সুষ্ঠু ভোট হবে না। ভোট সুষ্ঠু হতে হলে প্রশাসনসহ সবাইকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”

সকাল সাড়ে ১০টায় মিশনপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল, সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম মজনু, শ্রমিক দলের সভাপতি এসএম আসলাম প্রমুখ।

১৬ জানুয়ারি নাসিক নির্বাচন। এতে সাতজন হচ্ছে মেয়র পদপ্রার্থী এবং ১৪৮ জন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।

Link copied!