রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট। এই রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কুমিল্লা অংশের নাওটি, আলীশ্বর, লালমাই ও ময়নামতি স্টেশনকে আধুনিকায়ন করা হলেও ব্যস্ততম এ স্টেশনটিকে আধুনিকায়ন করা হয়নি। এই স্টেশনটি বর্তমানে অবহেলিত ও রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এর সংস্কার না হওয়ায় এবং ট্রেনের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি না করায় নাঙ্গলকোটের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, স্টেশনটিতে আন্তঃনগর, মহানগর ও লোকালসহ প্রতিদিন আসা-যাওয়াসহ আট জোড়া ট্রেন যাত্রা বিরতি করে। এরমধ্যে এক জোড়া মহানগর ও তিন জোড়া আন্তঃনগর। বাকিগুলো লোকাল ট্রেন। যাত্রাবিরতি দেওয়া আন্তঃনগর ও মহানগর ট্রেনগুলো হলো পাহাড়িকা, মেঘনা, চট্টলা ও মহানগর এক্সপ্রেস। লোকাল ট্রেনের মধ্যে আছে কর্ণফুলী, সাগরিকা, ময়মনসিংহ ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস।
আন্তঃনগর ও মহানগর ট্রেনগুলোতে টিকিট নির্ধারিত আছে মাত্র ৮০টি। আর লোকাল ট্রেনগুলোর মধ্যে সাগরিকা ও কর্ণফুলীতে টিকিট নির্ধারিত আছে ৭৫টি। আন্তঃনগর ও মহানগর ট্রেনের সবগুলো টিকিটই শেষ স্টেশন অর্থাৎ চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার জন্য বরাদ্দ। মাঝামাঝি ও স্বল্প দূরত্বের স্টেশনগুলোর জন্য কোনো টিকিট বরাদ্দ নেই এসব ট্রেনে। এতে করে বেশ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষের যাতায়াত চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়। চট্টগ্রামে চাকরি ও কুমিল্লায় পড়াশোনা, চিকিৎসা, নানা কাগজপত্র সংক্রান্ত কাজে যাতায়াত করেন নাঙ্গলকোটের মানুষজন। কিন্তু এ স্টেশন থেকে কোনো ট্রেনেই কুমিল্লার জন্য আসন বরাদ্দ নেই। যার কারণে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়ায় সড়কপথে যাতায়াত করতে হয় মানুষকে। তাছাড়া ট্রেনে যাতায়াত করলেও অন্য স্টেশনের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিট অনলাইনে সংগ্রহ করতে হয়, যা ব্যয় সাধ্য। আবার টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠলেও গুনতে হয় জরিমানা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ কক্ষ থাকলেও সেখানে বসার ব্যবস্থা নেই। ভেতরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। একমাত্র শৌচাগারটিও ব্যবহারের অনুপযুক্ত। বৃষ্টি হলে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন কক্ষে।
এদিকে অনলাইনে টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই স্টেশনটিতে, নেই প্রিন্টার ও প্রয়োজনীয় লোকবল। মাত্র পাঁচজন লোকবল দিয়ে চলছে স্টেশনটি। নিরাপত্তার জন্য নেই পুলিশ ফাঁড়ি। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ তো দূরের কথা, একজন আনসার সদস্যও নেই স্টেশনটিতে। একমাত্র পাদচারী সেতুটি বেশ উঁচু হওয়ায় এটাও ব্যবহার করেন না যাত্রীরা।
সূত্র আরও জানায়, স্টেশনটির সমস্যা দূরীকরণ ও আধুনিকায়নের জন্য স্থানীয় কিছু ছাত্র ও চাকরিজীবী মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন, কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।
চিঠি দেওয়াদের মধ্যে একজন নাঙ্গলকোটের স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশীদ। মামুনুর জানান, নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনটির খারাপ দশা দেখে আমরা কয়েকজন মিলে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। তবে কেউ রেসপন্স করেনি। টিকিটের সংখ্যা বাড়ানো ও স্টেশন আধুনিকায়ন, দুটোই জরুরি ভিত্তিতে করা উচিত।
নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন নতুন ভবন তৈরি করে দেবেন। নিরাপত্তার জন্য লোকবল ও টিকিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে বলেও আমাদের জানানো হয়েছে। পাদচারী সেতু করা হবে নতুন করে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে সুফল ভোগ করবে এখানকার মানুষ।
রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, আখাউড়া-টঙ্গী ও লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজের আওতায় এ স্টেশনসহ আরও কয়েকটি স্টেশন আধুনিকায়ন করা হবে, তবে এটা সময়সাপেক্ষ। টেন্ডার আহ্বান এখনও হয়নি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক আনসার আলী বলেন, যেসব স্টেশনের কাজ আগে ধরা হবে, সেসব স্টেশনের মানুষ দ্রুত সুবিধার আওতায় চলে আসবেন।