• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দুই ছেলে ও বউয়ের মারধরের শিকার বৃদ্ধা মা


পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০২১, ১০:০১ পিএম
দুই ছেলে ও বউয়ের মারধরের শিকার বৃদ্ধা মা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় দুই ছেলে ও বউয়ের হাতে অমানবিক মারধরের শিকার হয়েছেন হালিমা খাতুন নামের এক সত্তরোর্ধ্ব বয়সী মা। তিনি বলেন, “সন্তানের হাতে মারধরের বিচার চেয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ছেলে ও ছেলের বউ কর্তৃক প্রাণনাশের হুমকির শিকারও হয়েছেন।”

রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে তেঁতুলিয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন বৃদ্ধা হালিমা খাতুন। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে দুই ছেলে এবং ছেলের বউয়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন তিনি।

নির্যাতিত ভূক্তভোগী ওই মায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া এলাকায়৷

সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগী মা হালিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “আমার মেজো ছেলে আব্দুল হামিদ (৩৮) ও হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৩৫), মেজো ছেলে হামিদের স্ত্রী জান্নাত (৩০) দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তারা আমাকে ভীষণ অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কয়েকদিন আগে স্বামীর সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মধ্যে আংশিক সম্পত্তি অন্যত্র বিক্রি করলে তারা সম্পত্তি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করার জন্য নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত ৬ ডিসেম্বর (সোমবার) সকালে আমার বসতবাড়ির টিনশেড পাকাঘরের সিঁড়ি মিস্ত্রি দিয়ে কাজ করার সময় তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠি, কোদাল ও ছোরা দিয়ে তা ভেঙে দেয়। আমি বাধা দিতে গেলে আমার বড় ছেলের বউ ফাহমিদা আক্তারের মাথায় কোদাল দিয়ে আঘাত করে তারা। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করি।”

হালিমা খাতুন আরও বলেন, “বড় ছেলের বউ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে গেলে আমার মাদকাসক্ত দুই ছেলে ও হামিদের স্ত্রী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি গালিগালাজ করার কারণ জানতে চাইলে তারা ধারালো ছুরি দিয়ে আমাকে মাথায় আঘাত করে। এ সময় আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি৷ এরপর মেজো ছেলে হামিদের বউ জান্নাত আমার উপর নির্যাতন চালায়। এ সুযোগে আমার ঘরে ঢুকে ট্রাংকের তালা ভেঙে জমি বিক্রির ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও আমার বড় ছেলের বউয়ের স্বর্ণ-গয়না নিয়ে যায়৷”

বৃদ্ধা হালিমা বলেন, “আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও হুমকি প্রদর্শন করে তারা। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমি মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। ছেলে হয়ে মায়ের চরিত্রহীন বলে বারবার উত্যক্ত করছে। গলায় রশি বেঁধে মরতে পর্যন্ত বলছে। তাই আমাকে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করতে হয়েছে। তবে আমি থানায় অভিযোগ করলেও এখনও মামলার নথিভুক্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমি থানায় কিংবা আদালতে যেতে পারছি না৷ মামলার কথা শুনলেই তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।”

এ সময় হালিমা আরও অভিযোগ করে বলেন, ২৯ বছর আগে আমার স্বামী তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর অতি কষ্টে আমার সন্তানদের লালন পালন করে বড় করেছি। তারা বড় হয়ে এখন আর আমার খোঁজ খবর নেয় না৷ কি খাই, না খাই কোন খোঁজ খবর না নিয়ে বরং দীর্ঘ দিন ধরে দুই ছেলে দ্বারা নানা ভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে হালিমা খাতুনের বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম ও বড় বউমা মাহমুদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। 

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সায়েম মিয়া বলেন, “আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ করে মামলা এন্টির সময় চেয়েছেন ওই নারী। তিনি যদি এই মুহূর্তেই মামলাটি করতে চান, তাহলে আমরা মামলাটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”


 

Link copied!