• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এক যুগ ধরে শিকলবন্দি স্বপন


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২২, ১০:৫৯ এএম
এক যুগ ধরে শিকলবন্দি স্বপন

প্রতিবেশীর কান কামড় দিয়ে ছিঁড়ে খোলা আকাশের নিচে ১২ বছর ধরে বাঁশঝাড়ে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক স্বপন বর্মণ (৩৫)। হতদরিদ্র পরিবারের ওই যুবকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউপির বীরবান্দা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের পবন বর্মণের ছেলে। 

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে চিকিৎসাবঞ্চিত স্বপন বৃদ্ধ মা-বাবার বেঁচে থাকার অবলম্বন না হয়ে এখন দুঃখের কারণে পরিণত হয়েছে। এদিকে স্বপনের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ সকল সরকারি সেবা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।  

স্থানীয় আজমত আলী বলেন, “বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে মেহগিনি গাছের সঙ্গে হাত পায়ে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণ। ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পলিথিনে শরীর মুড়িয়ে এখানেই দিন ও রাত কাটে তার। দূর থেকে তাকে খাবার দেন স্বজনরা। এখন ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের শিকলই তার পুরো পৃথিবী।”

প্রতিবেশী নমিতা বর্মণ জানান, ছোটবেলা থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল স্বপন। এক সময় তার বাবা পবন বর্মণ ও মা সুচিত্রা রানী বর্মণ নানা জনের কাছ থেকে ধার দেনা করে ছেলের চিকিৎসা করান। এক পর্যায়ে সুস্থ হয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন স্বপন। ছেলে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে ভেবে পার্বতী নামে এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন বাবা-মা। বিয়ের দুই বছরের মাথায় স্বপনের ঘর আলো করে আসে এক কন্যা সন্তান। আদর করে মেয়ের নাম রাখেন প্রীতি। এভাবেই সুখে দিন কাটছিল ওই যুবকের। 

এক পর্যায়ে মানসিক বিকারগ্রস্তের পুরনো সেই রোগ ফিরে আসে। যাকে তাকে কামড়াতে শুরু করেন স্বপন। এভাবে তার রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। একদিন পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীকে কামড় দিয়ে কান ছিঁড়ে নেন স্বপন। পরে পরিবারের লোকজন তার হাত ও পায়ে শিকল বেঁধে বাঁশঝাড়ে বেঁধে রাখে। সেই বাঁধন আরও শক্ত করতে শিকলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ১০টি তালা।

স্থানীয় জেনন কিন্ডার কার্ডেন স্কুলের অধ্যক্ষ জহির রায়হান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন স্বপন বর্মণের স্বজনরা অতি দরিদ্র। তার মা, বাবা ও ভাই সুজন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের বা কখনও স্থানীয় ইটভাটায় কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়। সরকার যদি এ বিষয়ে সদয় হয় তাহলে এই পরিবারটি ভীষণভাবে উপকৃত হবে।  

স্বপনকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে জানিয়ে শ্রীবর্দী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা আক্তার বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি তার ঘরের অবস্থা জরাজীর্ণ। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্প থেকে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এছাড়া তার মেয়ের জন্য শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হবে।”

Link copied!