• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
ভারড়া ইউপি নির্বাচন

আ.লীগের মাথাব্যথা বিদ্রোহী প্রার্থী


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৩, ০৮:৪০ এএম
আ.লীগের মাথাব্যথা বিদ্রোহী প্রার্থী

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ভারড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সরব প্রচারণায় চাপে রয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। একই ব্যক্তিকে বার বার মনোনয়ন দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিভাজন। প্রকট আকার ধারণ করেছে বিভেদ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী গোপনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর হারের আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য, ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাস, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা ব্যর্থতা তুলে ধরে ভোট চাইছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে কী কী উন্নয়ন করবেন তার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে ভোট প্রার্থনা করছেন।

ভারড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুল কদ্দুছ। তিনি পাঁচ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। গত বছরের ১৮ নভেম্বর তিনি মারা যান। তাতে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়। ওই ইউনিয়নে ১৬ মার্চ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সংঘাত সংঘর্ষ না হলেও সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া অপর সব প্রার্থী আতংকে রয়েছেন।

এবার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছের স্ত্রী রাশেদা বেগম, নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক জিএস বিএনপি নেতা ইকবাল কবির রতন, স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক মনির হোসেন রাজ্জাক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সালাউদ্দিন সালেহ।

গত নির্বাচনে আব্দুল কদ্দুছ পাঁচ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ হাজার ১৫২ ভোট। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রিয়াজ তালুকদার তিন হাজার ৯৫৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন। এর আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। রিয়াজ তালুকদার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নানা কারণে তার জনপ্রিয়তা হারান। এ কারণে গত নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। দল তাকে বহিষ্কার করে। নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটে হেরে যান। এবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু বকর ছিদ্দিক দীর্ঘদিন মেম্বার ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। জনগণের সঙ্গে তার ব্যাপক সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

এদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মোজাহেদুল ইসলাম মুছা গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন এই শর্তে রিয়াজ তালুকদারের পক্ষে নির্বাচন করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করেছেন। এবারও তিনি মনোনয়ন পাননি। তার অনুসারীরা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন এমনটাই বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার কয়েকজন অনুসারী।

চৌবাড়িয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিতর্ক ও দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তিকে আমরা ভোট দেব না। যারা জনগণের কাজ করবে মানুষের কথা ভাববে তাদের ভোট দেব।”

আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রিয়াজ তালুকদার বলেন, “সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছি। অবশ্যই তারা এর মূল্যায়ন করবে। শতভাগ সুষ্ঠু ভোটে আমি বিজয়ী হব। দলে কোনো কোন্দল নেই।”

বিদ্রোহী প্রার্থী আবু বকর ছিদ্দিক জানান, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তিনি শঙ্কায় আছেন তিনি। কারণ তার কর্মীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “জনগণ ভোট প্রয়োগ করতে পারলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।”

স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা ইকবাল কবির রতন বলেন, “আওয়ামী লীগ ভোট কেন্দ্র দখল করে, প্রভাব বিস্তার করে অতীতে সব ভোট নিয়েছে। এবারও জোর করে ভোট নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জয়ী হব।”

টাঙ্গাইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, “কয়েকজন প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আবেদন করেছেন। আমি তাদের শতভাগ আশ্বাস দিয়েছি। ইভিএমে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ভোট কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। ভোটের দিন পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত উপস্থিত থাকবে।”

Link copied!