ফরিদপুরে অতিরিক্ত মদ খেয়ে নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব (২৭)। তিনি জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি।
সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগ কোনো প্রেসবিজ্ঞপ্তি না দিলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সোমবার রাতে শোক প্রকাশ করে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফের যৌথ স্বাক্ষরিত ওই শোক বার্তায় দাবি করে বলা হয়, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম আজ (সোমবার) বিকাল আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাকিবুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের এ শোক বার্তার পর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে ফরিদপুরের সাংবাদিক ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ব্যক্তিরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাকিবকে সোমবার সকাল ৯টা ১০ দিকে ৪২৭৮৩/২৩ সিরিয়ালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার বন্ধু পরিচয়ে আবির নামে এক তরুণ এসে ভর্তি করায়। ভর্তির জায়গায় ‘পুলিশ কেস’ সিল মারা ছিল।
ভর্তি করতে এসে আবির জানান, বমির প্রবণতা থাকায় রাকিবকে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এক নারী জানান, ভর্তি হওয়ার সময় রাকিবুল আরিফকে বলেছিল, “মদের সঙ্গে কি খাওয়ালি আমার বুক ও গলা জ্বলে যাচ্ছে।”
এরপর আবিরের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে আবিরের যে ফোন নম্বরটি দেওয়া হয় তাতে কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মেডিকেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “বমির কথা বলে রাকিবুলকে ভর্তি করা হলেও তার সমস্যা ছিল অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া। তাকে দ্রুত আইসিতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।”
ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, “এটি একটি পুলিশ কেস। এ জন্য রাকিবুলের মৃত্যুর পর এ জন্য যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।”
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরীয়ার বলেন, “এ মৃত্যু সংক্রান্ত ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় কোনো তথ্য নেই।”
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানমজীদুল রশিদ ওরফে রিয়ান জানান, তার জানা মতে রাকিবুল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। অ্যালকোহলজনিত মৃত্যুর ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।
রিয়ান আরও জানান, রাকিবুলকে তিনি চেনেন না। কেন্দ্র কমিটি অনুমোদন করার সময় তার নাম হাতে লিখে দিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।
পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, “এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত জেনে আপনাদের জানাতে পারব।”