• ঢাকা
  • বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তিন বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি ফারুক


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২, ০৩:০৩ পিএম
তিন বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি ফারুক

তিন বছর ধরে লোহার শিকলে বন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন মো. ওমর ফারুক (৫০)। নিজ ঘরের পেছনে একটি টিনের খোলা ছাপড়ার নিচে তাকে কোমরে শিকল আর তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার শরীরের থাকে না কোনো কাপড়। বস্ত্রহীন থাকতে পছন্দ করেন তিনি। সেখানে চলছে তার খাওয়াদাওয়া আর প্রস্রাব-পায়খানা। এদিকে স্বামীর এমন অবস্থায় টিকতে না পেরে ১৭ বছরের সংসার ছেড়ে চলে যান স্ত্রী রাশিদা বেগম। একমাত্র ছেলের পড়ালেখাও মাটি হয়ে গেছে। তছনছ হয়ে গেছে ফারুকের পুরো সংসার। 

ফারুক ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের সদরবেড়া গ্রামে মৃত শেখ আমিন উদ্দিনের ছেলে। বাবা এক যুগ আগে মারা গেছেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ফারুক ছিলেন দ্বিতীয়। অভাবের কাছে হার মেনে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করে বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেন তিনি। ২০ বছর আগে উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর গ্রামে বিয়ে করেন। সুখের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়েসন্তান জন্ম নেয় এই দম্পতির। ফারুকের জীবনকাহিনির এসব তথ্য জানান প্রতিবেশীরা।

ফারুকের ৮০ বছর বয়সী মা ফুলি বেগম বলেন, “২২-২৩ বছর আগে একদিন গভীর রাতে বাড়ির পাশের ফসলি মাঠে ধানের খড় আনতে যায় ফারুক। সেখান থেকে বাড়ি ফিরেই পাগলামি শুরু করে। পরনের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে ও ঘরের আসবাব ভাঙচুর করে। চিকিৎসা করানোর পর সে সুস্থ হয়। পরে তাকে বিয়ে করিয়ে দিই। তিন বছর আগে ফারুক আবার পাগলামি শুরু করে। দুই-তিনবার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিলেও সে ভালো হয় না। তারপর থেকে বাধ্য হয়েই তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছি।”

ফুলি বেগম আরও বলেন, “শিকল খুলে দিলে কারও ক্ষতি করবে, অথবা কোথাও চলে যাবে, তাই কোথাও যাতে যেতে না পারে তার কারণেই ওকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। এখন টাকাপয়সার অভাবে তাকে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছি না। অভাবের তাড়নায় দেড় মাস আগে ওর স্ত্রী সংসার ছেড়ে চলে গেছে। শুনেছি সংসার ছেড়ে সে নাকি সৌদি আরব চলে গেছে। এখন ওর দেখাশোনা খাওয়াদাওয়া সবই আমার এই বয়সে করতে হয়।”

তালমা ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন মিয়া বলেন, “বিষয়টি জানার পর ফারুকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার সুচিকিৎসার জন্য আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব।”

নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজি টুলু বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীন ফারুকের খোঁজখবর নিতে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ওর ভালো চিকিৎসার করার জন্য যা করার দরকার, তার সবই আমার পক্ষ থেকে করা হবে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!